আইএমএফের ঋণ অনুমোদন হতে পারে ৩০ জানুয়ারি

সংগৃহীত ছবি

আইএমএফের ঋণ অনুমোদন হতে পারে ৩০ জানুয়ারি

অনলাইন ডেস্ক

আগামী ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের চাওয়া সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর তিনি এই বিবৃতি দেন।

এর আগে গত রোববার আইএমএফের অন্যতম এই শীর্ষ কর্মকর্তা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছে আইএমএফ। এই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই এখন বাংলাদেশ সফর করছেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বিবৃতিতে অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ বলেন, ‘চলমান আলোচনায় আমরা এই ঋণ কর্মসূচির মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছি। কিভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে আরো দক্ষ একটি আর্থিক খাত গড়ে তোলার মতো দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জগুলো আলোচনায় এসেছে।

এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে উত্সাহ দিলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো সহনশীল করে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে। ’

আইএমএফের উপমহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ’

জলবায়ু বিনিয়োগে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর জলবায়ুু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোও আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) লক্ষ্য বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।  

সব ঠিক থাকলে ৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আরএসএফের আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার। প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী, শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।

এই ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার লক্ষ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।

এর আগে গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। তাদের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অক্টোবরের শেষে ঢাকায় আসে। দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। বাংলাদেশ এই অর্থ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৩৫২.৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে।

উন্নত রাষ্ট্রে উত্তরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাবে আইএমএফ

আইএমএফ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎকালে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অন্তোনিয়েতে মোনসিও সাইয়েহ এই আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, ‘২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং এর বাস্তবায়নে আইএমএফ বাংলাদেশকে তার সহায়তা অব্যাহত রাখবে। ’

মোনসিও সাইয়েহ বলেন, আইএমএফ দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং তিনি এই সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে এসেছেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বেল-আউটের জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতা চায় না, বরং পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সহযোগিতা চেয়েছে। ’  

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের বেল-আউট চাই না। আমাদের এই কর্মসূচি বেল-আউট নয়। ’

বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গোটা বিশ্ব কভিড-১৯-এর অভিঘাতের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছে। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলো মুদ্রাস্ফীতিসংক্রান্ত চাপ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় আইএমএফ পাশে থাকবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নে গতি মন্থর হয়েছে। বাংলাদেশও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কঠিন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে সরকার সামাজিক সুরক্ষা জাল ও খাদ্য কর্মসূচি বর্ধিত করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা জালের আওতা বর্ধিতকরণ এবং টিসিবি ও ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে তাদের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণের মতো নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ খাদ্য উত্পাদন বাড়াতে পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে এসেছে।  

তিনি বিগত এক দশকে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি ও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।

বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ঢাকায় নিযুক্ত আইএমএফের স্থায়ী প্রতিনিধি জয়েন্দু দে উপস্থিত ছিলেন।

 news24bd.tv/ইস্রাফিল