আগের নীতি দিয়ে এবারের রোহিঙ্গা সংকট নিরসন সম্ভব নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীI -ফাইল ছবি

আগের নীতি দিয়ে এবারের রোহিঙ্গা সংকট নিরসন সম্ভব নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ১৯৯২ সালের নীতি দিয়ে এবারের রোহিঙ্গা সংকট নিরসন সম্ভব নয়। ১৯৯২ সাল ও ২০১৭ সালের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। লাখ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে ২৫ বছর আগের সমঝোতা ও নীতিমালা বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকর নয়। সে কারণে বাংলাদেশ এর সংশোধন ও পরিমার্জন করে মিয়ানমার সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে।

সেই খসড়া সমঝোতা প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নেওয়া এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।  

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে বিআইআইএসএস মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের উপর অব্যাহতভাবে চাপ বাড়ছে। আগামী ১৬ অক্টোবর ব্রাসেলসসে এটি নিয়ে বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

সেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা আবারো মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা শরনার্থী সেলের প্রধান বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গা গণনা করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার। তারা বর্তমানে ১৭ টি পয়েন্টে আছে। সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে তিন মাস সময় লাগবে।  
রোহিঙ্গা নিবন্ধনে গতি কম উল্লেখ করে তিনি জানান, গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৮২ হাজার ৩২৮ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছেন।

এর আগে গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমারসহ ২৮ দেশের কূটনীতিকদের রোহিঙ্গা সংকটের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  বিদেশি কূটনীতিকদের স্পষ্টভাবে তিনি জানিয়ে দেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ঘোষিত ২৫ বছর আগের সমঝোতা ও নীতিমালা বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকর হতে পারে না। একইসঙ্গে তিনি রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে এবং রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন।  
 
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরও জানান, আমরা আত্মহননের পথ বেছে নেবো না। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমরা কাজ করছি। যুদ্ধ করবো না। যুদ্ধ করলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বলে কিছুই থাকবে না। সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তা প্রমাণ হয়েছে।   

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে’র সঙ্গে  গত ২ অক্টোবর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের মন্ত্রীকে জানানো হয়, 'বাংলাদেশে ৯ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আছে এবং আমরা চাই সবাই যেন শান্তিপূর্ণ উপায়ে ফেরত যায়। '
 
এর প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের মন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছিলেন ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরে যারা বাংলাদেশে এসেছে- যাচাই সাপেক্ষে তাদের প্রত্যাবাসনে তারা রাজি। যাচাইয়ের জন্য তারা ১৯৯২ সালে গৃহীত যৌথ নীতিগত সিদ্ধান্ত ও বিবৃতিকে ভিত্তি হিসেবে ধরার প্রস্তাব করে।  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী গতকাল বিদেশি কূটনীতিকদের বলেন, মিয়ানমারের এই সিদ্ধান্ত মানা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের বেশিরভাগেরই বাড়িঘর পুড়ে গেছে এবং প্রায় কারও কাছেই কোনও কাগজপত্র নেই। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষই বলেছে অর্ধেক রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়ে গেছে। যেহেতু রোহিঙ্গাদের কাছে কোনও কাগজ নেই, তাই আমরা চাই কোনও রোহিঙ্গা যদি তাদের বাড়ির ঠিকানা বলতে পারে, যাচাই করার জন্য সেটাই মানদণ্ড হওয়া উচিত।  

সম্পর্কিত খবর