সারার কর্ণিয়ায় আলো ফিরল দুজনের চোখে

সারা ইসলামের কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে একজনের চোখে

সারার কর্ণিয়ায় আলো ফিরল দুজনের চোখে

অনলাইন ডেস্ক

৩০ বছরের প্রচেষ্টা ও প্রতিক্ষার পর অবশেষে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভারিক কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা মরণোত্তর প্রক্রিয়ায় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হলো বাংলাদেশে। যা সম্ভব হয়েছে সারা নামক এক তরুণীর কল্যাণে। মূলত আগে থেকেই মরণোত্তর দেহ দানের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

ঢাকার বাসিন্দা সারা ইসলাম ১০ মাস বয়স থেকেই মস্তিষ্কে টিউমারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

সম্প্রতি তার একটি অপারেশন হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। এক পর্যায়ে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর তার অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকলে এবং সে ব্রেন ডেথের দিকে যাচ্ছে বুঝতে পেরে সারার মাকে কাউন্সেলিং করা হয় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে। ওই সময় সারার মা জানান, তার মেয়ে মরোণত্তর দেহ দানের কথা জানিয়েছিল।

সারা ইসলামের মরণোত্তর দান করা কিডনি অন্য দুই নারীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে প্রথম দুজনের দেহে মরণোত্তর দানের কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। আর তার দুটি কর্ণিয়া সুজন (৩০) ও ফেরদৌস রহমান (৫৬) নামে দুজনের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তারা দুজনেই নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউতে শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘ব্রেন ডেথ’ রোগীর অঙ্গদান ও বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘সারার কল্যাণে চারটি মানুষ নতুন করে বাঁচতে শিখবে। তার দুই কিডনিতে দুজন নারী বাঁচবে। আর কর্ণিয়া দিয়ে পৃথিবী দেখতে পারবে দুই পুরুষ। ’

সারার প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ), অন্যটি প্রতিস্থাপন করা হয় মিরপুরস্থ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে।  বিএসএমএমইউতে ট্রান্সপ্ল্যান্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।

কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে অপর ট্রান্সপ্ল্যান্টে নেতৃত্ব দেন ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক এ কে এম খুরশিদুল আলম।

এর আগে সারার শিক্ষক মা বলেন, সারা মৃত্যুর আগে তার দেহের সবকিছুই দান করে দিতে বলেছেন। ফলে বিষয়টি অনেকটা সহজ হয়। এরপর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার দেহ থেকে কিডনি ও কর্নিয়া নেওয়া হয়। সারার মা সম্মতিপত্রে সাক্ষর করেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বীরের মর্যাদা দেওয়া উচিত। মরণোত্তর কিডনি দানে উদ্বুদ্ধ করতে সারার এই দান মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। ’

news24bd.tv/মামুন