অভিবাসী প্রত্যাশীদের জোর করে গ্রিসে পাঠাচ্ছে ইতালি

সংগৃহীত ছবি

অভিবাসী প্রত্যাশীদের জোর করে গ্রিসে পাঠাচ্ছে ইতালি

অনলাইন ডেস্ক

ভবিষ্যতে একটু ভালো থাকার আশায় অবৈধ পথে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেয় অভিবাসী প্রত্যাশীরা। গন্তব্য হিসেবে তাদের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে ইতালি। তবে তাদের জোর করে দেশটি থেকে বের করে দিচ্ছে ইতালি প্রশাসন। এমনকি সমুদ্র পথকে অনানুষ্ঠানিক একটি কারাগারে হিসেবে তৈরি করেছে তারা।

অনুসন্ধানিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।

সংবাদ মাধ্যমটি বলছে, গত বছর দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া অভিবাসীদের জোর করে গ্রিসে পাঠিয়েছে ইতালি। তাদের গ্রিসে পাঠাতে বাণিজ্যিক জাহাজ ব্যবহার করছে দেশটি।  ওইসব অভিবাসী প্রত্যাশী আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকের নাগরিক।

অভিবাসী প্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, ইতালির ভেনিসের আদ্রিয়াটিক পোর্ট, আনাকোনা, বারি ও ব্রিনদিসি থেকে তাদের আটক করা হয়। সেখান থেকে তাদের জোর করে গ্রিসে পাঠানো হয়। গ্রিসে নেওয়ার সময় তাদের অন্ধকার একটি ধাতব বক্সে রাখা হয়। এমনকি তাদের খাবার ও সুপেয় পানি দেওয়া হতো না।

এক আফগান অভিবাসী প্রত্যাশী বলেন, ‘আমাকে জোর করে গ্রিসে পাঠানোর সময় একটি কন্টেইনারের মধ্যে রাখা হয়। আমাকে যেই কন্টেইনারে রাখা হয় সেটি ছিল দুই মিটার লম্বা। আর প্রশস্ত ছিল এক দশমিক ২ মিটার। ’

‘আমাকে একটি ছোট বোতলে করে পানি দিয়েছিল তারা। তবে কোনো খাবার দেয়নি। অনেক কষ্ট করে আমাকে সেখানে থাকতে হতো,’ যোগ করেন ওই আফগান নাগরিক।

আল-জাজিরা বলছে, হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে কয়েকজনকে গ্রিসে জোর করে পাঠিয়েছিল ইতালি। জোর করে পাঠানোর তালিকায় শিশুও ছিল। সেই তালিকায় ১৮ বছরের নিচে তিনজন ছিল।

গ্রিস সরকারের তথ্য মতে, গত দুবছরে ২৩০ জনের বেশি অভিবাসী প্রত্যাশীকে পাঠিয়েছে ইতালি। তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীদের মতে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ সবসময় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে না।

জাহাজ যখন কারাগার

ইতালি থেকে গ্রিসে যেতে বা গ্রিস থেকে ইতালিতে যেতে সবচেয়ে সহজ পথ হল সমুদ্র। এই পথেই বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনটি বাণিজ্যিক জাহাজটির কয়েকটি ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল।

সাংবাদিকরা জোর করে পাঠানোর এই চিত্র নিজের চোখে দেখেছেন। তারা জানান, জাহাজের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটে  অভিবাসীদের রাখা হতো। এই সংক্রান্ত একটি ফুটেজ তাদের কাছে রয়েছে।

টয়লেটের দরজার তালার ছিদ্র দিয়ে ওই ফুটেজ নেওয়া হয়। যেখানে দেখা যায়, পরিত্যক্ত টয়লেটটির ভেতরে দুটি ম্যাট্রেসসহ একটি ভাঙা ঝরনা রয়েছে। সেখানকার দেয়ালে বিভিন্ন ভাষায় লেখা নাম পাওয়া গেছে। অভিবাসী প্রত্যাশীদের বর্ণনার সঙ্গে ফুটেজের মিল রয়েছে দাবি আল-জাজিরার।

আরেকটি জাহাজের গ্যারাজে একটি ধাতব বক্সের সন্ধান পেয়েছে সাংবাদিকেরা। ওইসব বক্সে অভিবাসী প্রত্যাশীদের রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা।

জোর করে অভিবাসী প্রত্যাশীদের গ্রিসে পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে জাহাজের ক্রুরা। সাক্ষাৎকারের সময় তারা ওইসব বক্স ও টয়লেটকে কারাগারের সঙ্গে তুলনা করেন।

আইন অমান্য করছে ইতালি

১৯৯৯ সালে ইতালি ও গ্রিসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, কাগজপত্র ছাড়া অভিবাসী প্রত্যাশীদের ফেরত পাঠাতে পারবে ইতালি। তবে এই চুক্তিটি ইতালিকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয় না বলে দাবি আল-জাজিরার।
 
অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাশীদের জোর করে গ্রিসে ফেরত পাঠানো নিয়ে ২০১৪ সালে ইউরোপের একটি আদালত রায় দেন। ওই রায়ে ইতালির এই কার্যক্রমকে বেআইনি  ঘোষণা করা হয়।

তবে, সম্প্রতি সময় গ্রিসে পুশব্যক করে আইন অমান্য করছে ইতালি। অভিবাসীদের দিয়ে কাজ করা আইনজীবী আমারিলদা লিসি বলেছেন, ‘ইতালিতে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সাক্ষ্য তদন্তের ফলাফলের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তারা বিষয়টি গোপনে করছে। এমনটা আমরা জানতে পারছি না। কারণ, অভিবাসী প্রত্যাশীদের ইতালি প্রশাসন একটি আবদ্ধ কক্ষে আটকে রাখে। ’

news24bd.tv/মামুন