ডাণ্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে আইনজীবীদের আইনি নোটিশ

সংগৃহীত ছবি

ডাণ্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে আইনজীবীদের আইনি নোটিশ

অনলাইন ডেস্ক

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বেআইনিভাবে ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো বন্ধ করতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন কয়েকজন আইনজীবী। নোটিশে এ নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। রোববার (২২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সরকারকে এ নোটিশ পাঠান।  

নোটিশ পাঠানো আইনজীবীরা হলেন- মো. আসাদ উদ্দিন, মীর এ কে এম নুরুন্নবী, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম ও শাহীনুর রহমান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং কারা মহাপরিদর্শক বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার অনুরোধ জানিয়ে ১৫ কর্মদিবসের সময় দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন আইনজীবীরা।

পরে আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় গত ২০ ডিসেম্বরে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

যেখানে দেখা যায়, গাজীপুরে একজন আসামি ডাণ্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি ছবিসহ আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, শরীয়তপুরে আরেকজন আসামি একইভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন।

একই সময়ে একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকা কোর্টে আনা হয়। এর কিছুদিন আগে আরেকজন আইনজীবীকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে আনা হয়। এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুসহ অনেক আসামিকে হাতকড়া পরানোর ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  

নোটিশে বলা হয়, বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র পলায়ন রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্ব পরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দি সংখ্যা অনেক বেশি হয় সেক্ষত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ প্রবিধানের কোথাও ডাণ্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।

অন্যদিকে জেলকোড এবং কারা আইনে ‘কারা অপরাধে’র বর্ণনার পাশাপাশি শাস্তি হিসেবে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হাতকড়া এবং ডাণ্ডাবেড়ি ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কারাভ্যন্তরে কয়েদিরা সংশ্লিষ্ট ‘কারা অপরাধ’ করলে তার শাস্তি হিসেবে এর ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া যেসব কয়েদি পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে তাদের হাতকড়া বা ডাণ্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

মূলত ডাণ্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবলমাত্র জেলকোড এবং কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবলমাত্র হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ডাণ্ডাবেড়ি নয়।

news24bd.tv/আজিজ