ধাপে ধাপে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাবে বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

ধাপে ধাপে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাবে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্ব মন্দার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশসহ অনেক দেশই বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের নীতিমালা অনুযায়ী সব দেশকে ঋণ দেবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশও ধাপে ধাপে অল্প করে ঋণ পাবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন) এক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ।

গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সেলিব্রেটিং আ জার্নি টুগেদার : বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ফিফটিথ অ্যানিভারসারি ইভেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ট্রটসেনবার্গ।

ট্রটসেনবার্গ বলেন, বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল থেকে বার্ষিক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম। উল্লেখ্য, আইডিএ হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে সহজ শর্তের ঋণদাতা। পাঁচ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে পরিশোধযোগ্য এই ঋণ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেওয়া হয়।

ট্রটসেনবার্গ আরও বলেন, ‘করোনা সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশ বাজেট সহায়তা চায়।

তার পরও সবার আমরা চাহিদার মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে অল্প করে বাজেট সহায়তা দেব। তবে আমাদের পাশাপাশি বাজেট সহায়তার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। সবাই এগিয়ে এলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। ’ তিনি অরো বলেন, বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ থেকে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের অন্যতম হিসেবে এই যাত্রায় অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। তিনি বলেন, ‘আমরা একে অন্যের কাছ থেকে শিখেছি যে উন্নয়ন কিভাবে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। ’

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এই মুহূর্তে এই দেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, শিক্ষায় উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনে জোর দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের সাফল্যের একটি দিক হলো জলবায়ু সংকটে ভুক্তভোগীদের রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ। বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র বানানোর এই মডেলটি প্রশংসনীয়। ’

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে জানিয়ে ট্রটসেনবার্গ বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে এ দেশে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি। বিশ্বব্যাংক কানাডার সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনা করে এদের জন্য ৫৯ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। তবে আমি চাই, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক। ’

ট্রটসেনবার্গ বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশ অচিন্তনীয় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, কডিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জের সময়ে আমরা বাংলাদেশকে এর উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ’

এর আগে প্যানেল ডিসকাশনে বাংলাদেশে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ ট্রটসেনবার্গ। তিনি মনে করেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ কমলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বাড়ে। বাংলাদেশে শিক্ষায় বিনিয়োগে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বাংলাদেশের পাশে থাকবে বিশ্বব্যাংক।

প্যানেল ডিসকাশনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এখন অন্যতম সমস্যা। বিশেষ করে হাওর ও উপকূল এলাকায় বেশি। এসব এলাকায় বড় বিনিয়োগ দরকার। বছরে প্রবৃদ্ধির আড়াই থেকে ৩ শতাংশ দরকার বিনিয়োগ। জলবায়ুর কারণে ‘ক্লাইমেট রিফুজি’ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হবে। ডেল্টাপ্ল্যান কিছুটা হলেও বিনিয়োগের কিছু এলাকা ঠিক করে দিয়েছে। ”

প্যানেল ডিসকাশনে আরো অংশ নেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক আহমদ কায়কাউস।

জিডিপি এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার : বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক উদযাপন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের উন্নয়ন শুরু। বাহাত্তর সাল থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৪ গুণ। ১৯৭২ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু। আর মডার্ন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ হাসিনা। এটা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। ’ বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক অনেক সহায়তা করছে বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের বিকাশে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ট্রটসেনবার্গ। গতকাল সম্পর্ক উদযাপন অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ বিষয়ের ওপর আলোচনাকালে বিশ্বব্যাংকের এমডি ওই আশ্বাস দেন। এ সময় তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অগ্রগতির প্রশংসা করেন।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আগামী দিনে নতুন একটি ডাটা সেন্টার তৈরিতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার, স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠার জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার, ৩৫টি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ৭৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা কামনা করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

news24bd.tv/আজিজ