সৃষ্টির ভাবনা এমনটাই হতে হয়!

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

সৃষ্টির ভাবনা এমনটাই হতে হয়!

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

“আমি সব সময় বিজ্ঞান চর্চার কথা বলি | গবেষণার কথা বলি | গবেষণা যারা করে, তাদের মধ্যে প্রতিদিন অনেক নতুন নতুন ভাবনা সৃষ্টি হয় | হতে পারে এটা কাল্পনিক কিংবা বাস্তব | কিন্তু ভাবনা তো তৈরি হয় | এই ভাবনাগুলো তাদের জন্য একটা পৃথিবী না, অনেকগুলো নতুন ও অজানা পৃথিবীর দরজা খুলে দেয় | একটা অদ্ভুত সৃষ্টির আনন্দ সারা গায়ে যেন বৃষ্টির আলো ছড়িয়ে দেয় | 

আমি তো মনে করি, সবার মধ্যে একটা জানার অদৃশ্য জায়গা থাকে সেটা তার মনকে আলোড়িত, শিহরিত করে | তখন একটা মাতৃগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসা শিশুর পৃথিবী দেখার আনন্দ তৈরি হয় | চোখ, মন আর মাথার কারুকাজ তাকে বলে দেয়, ‘তুমি একটা নতুন কিছু ভাবছো’ | ভাবনাটা সত্যি হয়ে দৃশ্যমান কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসে | এটাই উদ্ভাবন | সেটা ছোট বা বড়ো- যে কোনো ধরনের হতে পারে | 

কিন্তু সৃষ্টি তো সৃষ্টিই | যেমন: একটা নতুন ধরনের কাগজের ঘুড়ির তৈরির কথা কেউ ভাবছে | যেটা উড়তে কোনো বাতাস লাগবেনা | ঘুড়ি উড়াতে কার না ভালো লাগে, বাতাস ছাড়া ঘুড়ি, সেটা তো আরো মজার | জীবনটাও তো ঘুড়ির মতো | তার নাটাইটা কার হাতে কে জানে | জানবারও দরকার নেই | নাটাইটাও আমার হাতে ঘুড়িটাও আমার হাতে | এটা যেমন সত্যি, তেমনি জীবনটাও সত্যি | 

জীবনের নাটাই আর মনের ঘুড়ি যদি নিজের হাতে থাকে, তাকে কেউ কেড়ে নিতে পারেনা | কারো এতো বুকের পাটা নেই | আমি আমিই | এর মানে আমিত্ব নয় | এটা হচ্ছে আমার বিশাল ভাবনা আর দৃষ্টিভঙ্গির জগৎ | যা আমাকে সৃষ্টির আনন্দে পুলকিত করে | বলে দেয়, কে বললো তুমি পারবেনা? তুমিই তো পারবে | হয়তো কালকের দিনটা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে | হয়তো তোমার একটা নতুন ভাবনা পৃথিবীকে অবাক করে দেবে | 

রাশিয়ার ফিলিপ বুদেকিন এর কথা কি মনে পড়ছে ? সে একটা ভয়ঙ্কর গেইম তৈরি করেছিল যার নাম ‘ব্লু হোয়েল’| ছেলেটা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং আর মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছে । কিন্তু সাউন্ড বা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারেনি তবে সৃষ্টি করেছে, ইতিবাচক না নেতিবাচক সেটা তো যুক্তি-তর্কের বিষয় | আমরা আগুনে হাত দিবো কি দিবোনা, সেটা তো আমার সিদ্ধান্ত কিন্তু আগুন তো ফেলে দিতে পারবোনা। সেটা কাজে লাগবেই | তার মনে হয়েছে সে ভালো কাজ করেছে | সেটা তার নিজের ভাবনা | মনোবিজ্ঞান পড়েছে, অথচ সে নিজেই জানতোনা সে একজন মানসিক রোগী|!

মা আর ভাইয়ের দ্বারা নিপীড়িত হয়ে বুদেকিনের মনে হয়েছে সবাই বুঝি পৃথিবীর জঞ্জাল | সে একটা কথা বলেছে | কথাটা এমন ‘যেখানে মানুষ আছে, সেখানে কিছু জীবন্ত বর্জ্যও আছে। ওইসব মানুষের সমাজে কোনো প্রয়োজন নেই।

তারা হয় নিজেরা সমাজের জন্য ক্ষতি, না হয় তারা সমাজের ক্ষতির কারণ। আমি সমাজের ওইসব বর্জ্য পরিষ্কার করতে চাই। ’ 

তার এই ভাবনাটা সে অন্যভাবে ভাবতে পারতো | যেমন: মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে | মানুষকে ভালো হবার জন্য অনুপ্রাণিত করে | কিংবা এমন একটা বিস্ময়কর সৃষ্টি সে করতে পারতো, যেটার আলোর নিচে এসে দাঁড়ালে সব খারাপ মানুষরা ভালো হয়ে যায় |কিন্তু কোথায় যেন একটা মরীচিকার ধুলোয় ভরা মতো ভাবনা| তার তৈরি করা গেইম খেলে যে অনেক স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো মন নেতিবাচকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে মৃত্যুকে বেছে নিবে, সেটা তার ভাবনায় কি কখনো এসেছে? হয়তোবা, হয়তোবা না | 

সৃষ্টিতে বিকল্প থাকে | বিকল্প আছে বলেই ভাবনা আছে | ভাবনার মধ্যে যেটা সবচেয়ে ভালো, সেটাই সৃষ্টির ভাবনা | আমরা যখন কোনো একটা সৃষ্টি নিয়ে ভাববো, সেটা যেন মানুষের জীবনে সুখ আর সমৃদ্ধি নিয়ে আসে | সেটা নিয়েই তো আমাদের বেশি করে ভাবতে হবে | 

আজকাল মানুষ কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে | সামনে এক, ভেতরে আরেক | মুখে হাসি নেই, তবু জোর করে হাসা | সব যেন যান্ত্রিকতার দখলে চলে গেছে | কিন্তু তাই বলে সময় আর সভ্যতা তো বসে থাকবেনা | আমরা এগুলোকে সাথেই নিয়েই এগুবো | কিন্তু মনটা হবে পানির মতো আর ভাবনাগুলো হবে সৃষ্টিশীল | আমরা যদি মানুষ হতে পারি, তবে আমরাই তো পৃথিবীকে এগিয়ে নিবো | মানুষ আর তার ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে | মানুষ ইতিহাস গড়ে নাকি ইতিহাস মানুষ গড়ে এর উত্তরটাও পেয়ে যাবো | তখন তো আনন্দ আর আনন্দ | চাঁদের হাসির বাঁধ ভাঙা আনন্দ | 

কি পারবো তো আমরা? পারতেই হবে | মানুষ কখনো পরাজিত হয়না | পরাজিত হয় তার কুলষিত ভাবনা | এখন ভাবনা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে | আপনি, আমি, তুমি, তোমরা আর আমরা সবাই মিলে খুব কাছাকাছি আসি আর আলোকিত ভাবনা সৃষ্টির ইতিহাস গড়ার অংশীদার হই | জয় আমাদের হবেই |”
========

news24bd.tv

লেখক: অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ, ডুয়েট
সদস্য, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ

লেখাটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত

========

অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর