নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মাকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় ছেলে হুমায়ুন কবির হুমুসহ (২৭) সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে এই আদেশ দেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ছেলে হুমায়ুন ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নিরব (২৬), নুর ইসলাম (৩২), কালাম (৩০), সুমন (৩৩), হামিদ (২৮) ও ইসমাইল (৩০)। আসামিরা সবাই সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাজমারা গ্রামের বাসিন্দা।
আদালত ও মামলা নথি সূত্রে জানা যায়, নিহত নারীর দুই সংসারের দুই ছেলে। আগের সংসারের ছেলে বেলাল তার মাকে জিম্মায় রেখে কয়েকজনের কাছ থেকে চার লাখ টাকা সুদে ঋণ নেন।
তার মা ১৩ শতক জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে বলেন। হুমায়ুন মায়ের মালিকানাধীন ১৪ শতক ও মৃত ভাই বেলালের স্ত্রীর মালিকানাধীন ১০ শতক জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে বলেন। এতে তার মায়ের অসম্মতি ছিল।
অন্যদিকে ওই নারী তার ভাই দুলালের কাছে সাড়ে ৬২ হাজার টাকা পাওনা ছিলেন। পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য তিনি ভাইকে চাপ দেন। এ কারণে হুমায়ুনের মামাতো ভাই কালাম ও মামাতো বোনের জামাই সুমন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। প্রতিবেশী ইসমাইল ও হামিদ হুমায়ুনকে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।
হুমায়ুন জবানবন্দিতে জানান, বেলালের স্ত্রীর জমি থেকে দুই শতাংশ হামিদকে ও বাকি আট শতাংশ ইসমাইলকে দেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মায়ের জমি সমান পাঁচ ভাগ করে হুমায়ুন, নোমান, সুমন, কালাম ও নুর ইসলামকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রতিশ্রুতিতে তারা ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাড়ির পাশে একটি ব্রিজের ওপর বসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। ওই রাতেই ঘরের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে নূরজাহানকে হত্যার পাঁচ টুকরো করে পাওনাদারদের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন।
হত্যার পরদিন বিকেলে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের একটি বিলের মাঝের বিভিন্ন ক্ষেত থেকে নূর জাহানের পাঁচ খণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। এ হত্যাকাণ্ডে প্রথমে নিহতের ছেলে হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরে পুলিশি তদন্তে হত্যার সঙ্গে সরাসরি বাদীর জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। একই সঙ্গে তার আরও ছয় সহযোগী মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পায় পুলিশ।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘রায় ঘোষণার সময় আদালতে সাত আসামি উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় ২৭ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড। যে মা সন্তানকে জন্ম দিলেন সেই সন্তান কীভাবে মাকে হত্যা করে। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। ’
news24bd.tv/মামুন