কাজলের নায়িকা হয়ে ওঠা

কাজল আগরওয়াল

কাজলের নায়িকা হয়ে ওঠা

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

যারা হিন্দি, তামিল ও তেলেগু ছবির ভক্ত, তাদের কাছে কাজল আগরওয়াল অতি পরিচিত মুখ। চলচ্চিত্র জগতে শক্তপোক্ত পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও অভিনয়দক্ষতা, অসাধারণ রূপ ও দৃঢ় মনোবলের জোরে আজ তিনি বলিউড, তামিল, তেলেগু ও মালয়লম ছবির জনপ্রিয় নায়িকা। উপহার দিয়েছেন অনেকগুলো ব্লকবাস্টার ছবি।  মায়াবী চোখের ইশারায় দর্শকের মনে ঢেউ তুলে চলচ্চিত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

কিন্তু জানেন কি এই অভিনেত্রীর বাবা-মা কেউই এই জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়?

কাজল আগরওয়াল ১৯ জুন ১৯৮৫ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বিনয় আগরওয়াল পেশায় একজন উদ্যোক্তা এবং মা সুমন আগরওয়াল একজন ময়রা (মিঠাইত্তয়ালা)। নিশা আগরওয়াল নামে কাজলের একটি ছোট বোন আছে। তিনিও তামিল, তেলেগু ও মালয়লম অভিনেত্রী।

বিয়ে করেছেন গোল্ড জিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করণ ভালেছাকে।  

তিনি কোলাবা, মুম্বাইয়ের সেন্ট অ্যান উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং জয় হিন্দ কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর মুম্বাইয়ের কে. সি. কলেজ থেকে স্নাতক শেষে গণমাধ্যম বিষয়ে ডিগ্রী নেন। মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে মডেলিং কর্মজীবন শুরু করেন। অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে তাঁর পরিকল্পনা ছিলো ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমবিএ পড়ার। এ ব্যাপারে এক সাক্ষাতকারে কাজল বলেন, 'কিউ! হো গায়া না...' ছবিতে আমি যখন অভিনয় করি তখনও আমি ছোট। ২০১১ সালে সিংঘাম ছবির মাধ্যমে ফের বলিউডে ফিরে আসি। তখন আমার মাথায় অভিনয় ছিল না বললেই চলে। প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল এমবিএ করার। কিন্তু, ভাগ্যকে মেনে নিতে হয়।

কাজল বলেন, সিংঘাম ছবির আগেও হিন্দি ছবির প্রস্তাব আমার কাছে ছিল। কিন্তু, সময় বের করতে পারিনি। বছরে আমার হাতে ছিল পাঁচটি ছবি। পরে রোহিত যখন সিংঘাম ছবির জন্য প্রস্তাব দিলেন, সেটা ফেলতে পারিনি। কারণ, অজয় ও রোহিতের সঙ্গে কাজ করা ছিল আমার স্বপ্ন। গল্পটাও ভালো লাগে। তাই রাজি হয়ে যাই। এছাড়া রোহিত মূলত একটা ছবিটির জন্য একটা নতুন মুখ খুঁজছিলেন যার অভিনয় ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। তারা আমার মাগাধীরা ছবিটি দেখেই আমাকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০০৪ সালে ১৯ বছর বয়সে কাজল আগরওয়াল প্রথম বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার প্রথম ছবি 'কিউ! হো গায়া না...' । এই ছবিতে তিনি একটি ছোটখাট ভূমিকায় অভিনয় করেন। তবে এই ছবির মাধ্যমেই তিনি অনেক বড় বড় পরিচালক-প্রযোজকদের নজরে পড়েন। অবশ্য এরপর দীর্ঘ একটা সময় কাজল দক্ষিণী ছবিতে কাজ করেন।

৫ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার কাজল আগরওয়াল তেলেগু চলচ্চিত্রে পা রাখেন ২০০৭ সালে। তেজা পরিচালিত 'লক্ষ্মী কালিয়ানাম' চলচ্চিত্রে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন কাজল। তবে ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। ওই বছরই কাজল কিষ্ণ ভামসি পরিচালিত 'চান্দামামা' চলচ্চিত্র কাজ করেন। ছবিটি সফলতার মুখ দেখে।

তবে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মূলত মাগাধীরা (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর। এটি ছিলো তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সাফল্য। এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ তেলেগু অভিনেত্রী হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে মনোনীত হন। ছবিতে কাজলের বিপরীতে অভিনয় করেন দক্ষিণ ভারতের ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা রাম চরণ। আজও ইউটিউবে ছবিটির ভিউ প্রতিদিন বাড়ছে হুহু করে।

এরপর ডার্লিং (২০১০), বৃন্দাভানাম (২০১০), মি. পারফেক্ট (২০১১), বিজনেসম্যান (২০১২), নায়ক (২০১৩) এবং বাদশাহ (২০১৩) চলচ্চিত্রে ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে তিনি তেলেগু চলচ্চিত্রে শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়া গোভিনডুডু আন্দারিভাদেলে (২০১৪), টেম্পার (২০১৫) এবং কয়েদি নম্বর ১৫০ (২০১৭) ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের ব্যাপক সাড়া পান।

মায়াবী মুখশ্রীর অধিকারি কাজল বেশ কিছু জনপ্রিয় তামিল ছবিতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে রয়েছে নান মহান আল্লাহ (২০১০) মাত্তারান (২০১২), ঠুপ্পাক্কি (২০১২), জিল্লা (২০১৪), ভাইভগাম (২০১৭) এবং মার্শাল (২০১৭)।  তিনি বলিউডে প্রত্যাবর্তন করেন সিংঘাম (২০১১) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। বক্স অফিসে ছবিটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। ব্লকবাস্টার এ ছবিটির পর তার 'স্পেশাল ২৬' ছবিটিও বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করে।

চলচ্চিত্র ছাড়াও কাজল জনপ্রিয় নানা ব্রান্ডের প্রচারণায় অংশ নেন। অভিনয় করেন মঞ্চে। চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরুর আগে তিনি মডেলিংয়ে নাম লেখান। অনেক বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেন। ঐশ্বরিয়া রাই, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অসিনের পর কাজল লাক্সের জন্য ব্র্যান্ড দূত নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ব্র্যান্ড দূত হিসেবে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের প্রতিনিধিত্বও করেন।

গত বছর হঠাৎ করে কাজলের একটি ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ছবিতে কাজলকে 'বেবি বাম্প' সহ দেখা যায়। ছবিটি নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে- তাহলে কি বিয়ের আগেই মা হয়ে গেলেন কাজল? কারণ বলিউডের একাধিক অভিনেত্রীর জীবনে এমনটা ঘটেছে। তবে পরবর্তীতে আসল ঘটনা সামনে আসে। দক্ষিণী ছবি 'নেনে রাজু নেনে মন্ত্রী' ছবির জন্য তাঁকে গর্ভবতী নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়। আর ছবির প্রচারণার স্বার্থেই কৌশলে কাজলের এই ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

সূত্র: উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

সম্পর্কিত খবর