হাদিসে আজানের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আজান ও প্রথম কাতারের মর্যাদা মানুষ যদি জানত আর লটারি ছাড়া সে সুযোগ তারা না পেত, তাহলে লটারি করত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৮৯)
কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোনো বর্ণনায় এমনটা পাওয়া যায় না যে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) আজান দিয়েছেন। এত এত ফজিলতপূর্ণ কাজ কেন নবী (সা.) জীবনে একবারও করেননি।
এক. আজানের মাধ্যমে মূলত নামাজের জন্য ডাকা হয়। যদি রাসুল (সা.) ‘হাইয়া আলাস-সালাহ’ তথা আসো নামাজের দিকে বলার পরও কেউ যদি না আসত তাহলে সে গুনাহগার হতো এবং বাহ্যত রাসুল (সা.)-এর আহ্বান অস্বীকারকারী হিসেবে ধরা হতো।
দুই. রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি আজান দিতেন, তাহলে সেখানে এই সম্ভাবনা থাকে যে অন্য কোনো নবীর ব্যাপারে তিনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন। কারণ আজানের শব্দের ভেতরে রয়েছে ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। ’
তিন. নিজে নিজের সাক্ষী হতে পারে না। সাক্ষ্য অন্যজন দেয়। নিজে নিজের সাক্ষী হতে পারে না। আর আজানের মধ্যে মুহাম্মদ (সা.) নবী হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষ্য আছে। সে জন্য তিনি নিজে কখনো আজান দেননি।
চার. যেহেতু আজান অন্য সাহাবির স্বপ্নের মাধ্যমে শুরু হয়েছে, আর রাসুল (সা.) তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। সে জন্য আজানের দায়িত্ব অন্যের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
পাঁচ. আজান হচ্ছে আমানত। আর এই আমানতের দায়িত্ব তিনি অন্যের কাছে সোপর্দ করেছেন, নিজের ওপর রাখেননি। হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন (ওয়াক্তের) আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৭)
ছয়. রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যেহেতু সর্বদা ব্যস্ত থাকতেন, এ জন্য তিনি আজানের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। তেমনিভাবে খোলাফায়ে রাশেদিনও আজান দেননি। তারা সবাই ইমামতি করেছেন; কিন্তু কেউ আজান দেননি।
সাত. আল্লামা ইজ্জদ্দিন ইবনে আব্দুস সালাম বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি জীবনে একবার আজান দিতেন, তাহলে হয়তো রাসুলের কাছে এটা ধারাবাহিকভাবেই চাওয়া হতো যেন তিনি সর্বদা আজান দেন। কিন্তু অন্য দায়িত্বের পাশাপাশি রাসুলের পক্ষে সব সময় আজান দেওয়াটা সম্ভব নয়। তাই রাসুল (সা.) একবারও আজান দেননি যেন এটা তার জন্য অবধারিত না হয়ে যায়।
(আলজাজিরা ও আল-খালিজ ডট নেট অবলম্বনে)