ফিলিপাইনে পেঁয়াজ কেনা যেন বিলাসিতা!

সংগৃহীত ছবি

ফিলিপাইনে পেঁয়াজ কেনা যেন বিলাসিতা!

অনলাইন ডেস্ক

তীব্র পেয়াজ সংকটে পড়া ফিলিপাইনের রেস্তোরাঁয় রেস্তোরাঁয় চোখে পড়বে একটি নোটিশ। যাতে লেখা ‘খাবারের ওপর বেরেস্তা দেওয়া হয় না’। দেশটির সরকারি হিসাব মতে, গত এক মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭০০ পেসো, যা প্রায় ১৩ ডলারের সমান।  সেখানে এক কেজি মাংসের দামে মিলছে না এক কেজি পেয়াজ।

এমনকি কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম দেশটির দৈনিক ন্যূনতম মজুরিকেও টপকে গেছে।

বিবিসি লিখেছে, গত কিছুদিনে দাম সামান্য কমলেও অনেক ফিলিপিনোর জন্য এখনও পেঁয়াজ কেনা যেন বিলাসিতা। দেশটির মধ্যাঞ্চলের সেবু শহরের একটি পিজার দোকান চালান রিজালদা মাউনেস। বিবিসিকে তিনি জানান, আগে তার দোকানে দিনে তিন থেকে চার কেজি পেঁয়াজ লাগত।

এখন তারা আধা কেজির বেশি কেনেন না, আসলে এর বেশি কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। ‌ ‘আমাদের খদ্দেররাও বিষয়টা বোঝেন, কারণ এটা তো কেবল রেস্তোরাঁর বিষয় না। পেঁয়াজের এই সঙ্কট নিয়ে সব বাসাতেই ভুগতে হচ্ছে। ’

ভারতবর্ষের মত ফিলিপিনো দৈনন্দিন রান্নাতে পেঁয়াজ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। সেই পেঁয়াজ এখন দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতীক হয়ে উঠেছে। গত মাসে ফিলিপাইনে মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতেই রেখেছেন। খাবারের দাম বৃদ্ধির এ পরিস্থিতিকে তিনি বর্ণনা করেছেন একটি ‘জরুরি অবস্থা’ হিসেবে। বাজারে সরবরাহ বাড়াতে এ মাসের শুরুর দিকেই তিনি লাল ও হলুদ পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিপাইনের অর্থনীতি মন্দার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় বাজারে চাহিদা বেড়েছে, তাতে এমনিতেই দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আবার বিরূপ আবহাওয়ায় পেঁয়াজ এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাতে দাম আরও বেড়েছে।

আইএনজি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নিকোলাস মাপা বলেন, কৃষি বিভাগ গত অগাস্ট মাসেই খাদ্য সঙ্কটের পূর্বাভাস দিয়েছিল। এরপর দুটো শক্তিশালী ঝড় পর পর আঘাত হেনেছে ফিলিপাইনে, যা ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে গেছে। ‘তাছাড়া অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় চাহিদাও বেশ বেড়েছে। ফলে আমরা মূল্যস্ফীতির একটি চক্র দেখতে পাচ্ছি। ’

ব্যাপক প্রভাব

মূল্যস্ফীতির এই চক্করে সেবুর স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও এসব দোকান খুব জনপ্রিয়। ভাজা শাকসবজি, মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার প্রচুর পেঁয়াজ আর সস দিয়ে পরিবেশন করা হয় এসব দোকানে। এরকমই এক দোকানের মালিক অ্যালেক্স চুয়া তার স্টলে বসে পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বললেন, ‘আমাদের খাবারের যে লোণা স্বাদ, তাতে খানিকটা ঝাঁঝ আর মিষ্টিভাব যোগ করে পেঁয়াজ। সে কারণে পেঁয়াজ আমাদের খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ’

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ফিলিপিনোদের এতটাই নাড়া দিয়েছে যে গত এপ্রিলে ইলোইলো সিটির তরুণী লাইকা তার বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়েছিলেন ফুলের বদলে পেঁয়াজের তোড়া হাতে।

স্থানীয় একটি পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বিয়ের পরে ফুলগুলো তো শুকিয়ে যাবে, শেষ পর্যন্ত ফেলে দেওয়া হবে। তাই আমি আমার বরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ফুলের বদলে আমরা পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারি কি না। ’ রসিকতার সুরে তিনি বলেন, ‘যে দিন পড়েছে তাতে ফুলের চেয়ে পেঁয়াজই বাস্তবসম্মত। তাছাড়া বিয়ের পরেও এটা আমাদের কাজে লাগবে। ’

বিবিসি লিখেছে, ফিলিপাইনেপেঁয়াজের এই আকালে অন্য দেশ থেকে পাচার হয়েও পেঁয়াজ আসছে। এ মাসের শুরুর দিকে ফিলিপাইন এয়ারলাইন্সের ১০ জন ক্রুকে লাগেজে করে প্রায় ৪০ কেজি পেঁয়াজ আনার অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়তে হয়।

শুল্ক কর্মকর্তারা অবশ্য পরে বলেছিলেন, লাগেজে করে পেঁয়াজ আনায় ওই ক্রুদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন না। তবে যাত্রীরা যেন অনুমতি ছাড়া পণ্য না আনেন, সে বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন তারা।

পেঁয়াজের এই সংকট প্রেসিডেন্ট মার্কোসকেও কাপে ফেলে দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রেখে তিনি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ অন্য কাউকে কৃষির দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন।

news24bd.tv/আজিজ