কাটা ছেঁড়া ছাড়াই আঁকা বাঁকা শিরার চিকিৎসা হয়

অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট অব ভ্যারিকোস ভেইন’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক কর্মশালায় বক্তারা

ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে সেমিনার অনুষ্ঠিত

কাটা ছেঁড়া ছাড়াই আঁকা বাঁকা শিরার চিকিৎসা হয়

অনলাইন ডেস্ক

দেশের প্রায় তিন কোটি লোক ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি (সিভিআই) রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ভেরিকোস ভেইন বা আঁকা বাঁকা শিরা রোগে আক্রান্ত যাতে হাত ও পায়ের শিরাগুলি গিঁট পাকানোর মত হয়ে ফুলে ওঠে।  বেশিরভাগ ভেরিকোস ভেইন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সমস্যাটি দেখতে অস্বাভাবিক লাগলেও কারো কারোর ক্ষেত্রে চুলকানি, ব্যথা, ফুলে ওঠা, খিঁচুনি, আক্রান্ত অংশের ত্বকের রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, অস্বস্তি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তখন দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে এই রোগটি দৃশ্যমান। অনেকের ক্ষেত্রে আবার লক্ষণ দেখা যায় না। এদের মধ্যে ১ শতাংশ অর্থাৎ তিন লাখ সিম্পোটেমিক ভেরিকোসে আক্রান্ত।  সময়মতো রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা না হলে অনেক সময় হাত-পা বিকল হয়ে অকালে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় অনেককে।

 আশার কথা, বর্তমানে কোন প্রকার কাটা ছেঁড়া ছাড়াই লেজার, আরএফএ, ভেনাসিল থেরাপির মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হচ্ছে।  

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের পক্ষ থেকে মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট অব ভ্যারিকোস ভেইন’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম মহিবুল আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইবনে সিনা ট্রাস্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (হাসপাতাল সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ওয়ালীউর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাকাল্টি ছিলেন আমেরিকান ভাসকুলার সার্জন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম. আবিদুর রহমান ও তার সহধর্মিনী ডা. ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম (বীর প্রতীক)। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিএম মকবুল হোসেন। কী-নোট স্পিকার ছিলেন ভাসকুলার ও এন্ডোভাসকুলার সার্জন ডা. একেএম জিয়াউল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা জানান, ভেরিকোস ভেইন রক্তনালির একটি সাধারণ রোগ। এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের শিরাগুলো চামড়ার নিচে ফুলে ওঠে। বাইরে থেকে আঁকা-বাঁকা মনে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত স্থানের চারপাশ কালো হওয়া, আক্রান্ত স্থানে আলসার, পায়ের চামড়া শক্ত হওয়া, হঠাৎ রক্তপাত, রক্তনালী বন্ধ বা থ্রমবোসিস হতে পারে। পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগটির চিকিৎসা কাটাছেঁড়া ছাড়াই লেজার, আরএফএ, ভেনাসিল থেরাপির মাধ্যমে করা হচ্ছে।

আমেরিকান ভাসকুলার সার্জন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম আবিদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ভেরিকোস ভেইন প্রাদুর্ভাবের ব্যাপকতা সম্পর্কে গবেষণা কম। পশ্চিমা দেশগুলোতে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ থেকে ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ১ থেকে ৪০ শতাংশ নারী এ সমস্যায় ভুগছে। পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে রোগটি বেশি দেখা যায়। বয়স্কদের আর্টিয়াল (ধমনী) ডিজিজ এবং তরুণদের আর্টিয়াল বা ভেইন সমস্যা বেশি দেখা যায়। নারীরা গর্ভধারণের সময় সমস্যায় বেশি ভোগেন। শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনও রোগটির জন্য দায়ী। ’

ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিএম মকবুল হোসেন বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের তেমন কোনও উপসর্গ থাকে না। তবে উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।  এই রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, আঁটোসাঁটো জামাকাপড় না পরা, বসার সময় পা তুলে বসা অভ্যেস করা, দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে বা বসে না থেকে কিছুক্ষণ পরপর অবস্থান পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন তিনি। ’

news24bd.tv/desk