হার্ট পাম্প করলে সারা শরীরে রক্ত পৌঁছে যাওয়ার মসৃণ রাস্তাগুলোকে রক্তনালি বলে। এটা ধমনি, শিরা বা রগ নামেও পরিচিত। এসব রক্তনালি হাত, পা, বুক, পেটসহ সারা শরীরে জালের মতো বিস্তৃত হয়ে আছে। তবে নানা কারণে এসব রক্তনালির কোথাও ব্লক হতে পারে, সরু হতে পারে বা স্বাভাবিকের চেয়ে মোটাও হয়ে যেতে পারে।
কারণ
বিভিন্ন কারণে রক্তনালির গায়ে চর্বি জমে রক্তনালি ব্লকড হয়ে সরু বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আবার মোটাও হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো—
♦ ধূমপান।
♦ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ।
♦ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
♦ রক্তে অতিমাত্রায় চর্বি।
এর মধ্যে ধূমপান বর্জনযোগ্য। আর অন্যগুলো নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
উপসর্গ
♦ হাঁটলে পায়ে ব্যথা হয়, বিশ্রাম নিলে কিছুটা কমে যায়।
♦ রোগের তীব্রতা বাড়লে বিশ্রামরত অবস্থায়ও পায়ে ব্যথা হতে পারে।
♦ পায়ে ঘা।
♦ রক্তনালির যে অংশ শুকিয়ে যায় (হাত, পা), সে অংশে আলসার হয়ে পরে পচন রোগ বা গ্যাংগ্রিন হতে পারে।
♦ রক্তনালির শিরাগুলো মোটা হলে আঁকাবাঁকা হতে পারে, যাকে বলে ভেরিকোস ভেইন।
♦ রক্তনালিতে এক ধরনের টিউমার হয়।
♦ রক্ত জমাট বেঁধে হাত বা পা ফুলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি) হতে পারে।
পরীক্ষা
সাধারণত রোগের উপসর্গ, হাত-পায়ের পালস বা নাড়ি পরীক্ষা করে এবং কম্পিউটারে বিশেষ পরীক্ষা (ডপলার পরীক্ষা) ও এনজিওগ্রামের মাধ্যমে রক্তনালির ব্লক নিরূপণ করা যায়। এরপর রোগীর ঊরু ও পেটের সংযোগস্থল কুঁচকিতে স্থানীয়ভাবে অবশ করে ব্যথামুক্ত অবস্থায় একটি সুই ঢুকিয়ে ইনজেকশন পুশ করে ছবি তোলা হয়। এই ছবিতে ব্লক ধরা পড়ে, যাকে বলে এনজিওগ্রাম। হার্টের রক্তনালির ব্লকও এভাবে নির্ণয় করা যায়। এই এনজিওগ্রামের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার করতে হয়।
চিকিৎসা
এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রক্তনালির ব্লক অপসারণ করা হয়। যখন এনজিওগ্রাম করা হয়, তখনই সরু বা বন্ধ রক্তনালি প্রথমে বেলুন দিয়ে মোটা করে ওই স্থানে একটি রিং, আংটি বা স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে রিংয়ের মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল করতে পারে। এর সুবিধা হলো, এতে কাটাছেঁড়ার দরকার হয় না এবং হাসপাতালে কম সময় থাকতে হয়। এতে ইনফেকশনের আশঙ্কা কম।
এ ছাড়া কাটাছেঁড়া করে রক্তনালির ব্লকের স্থানে জমে থাকা চর্বি পরিষ্কার করে অথবা বাইপাস অপারেশনের মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
আবার কোনো কারণে হাত বা পা পচে গেলে তা কেটে (অ্যাম্পুটেশন) ফেলতে হয়। তখন এটি ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। সচরাচর যেসব পঙ্গু লোক দেখা যায়, তাদের বিরাট অংশ রক্তনালির ব্লকজনিত পচন রোগে আক্রান্ত। তাই রক্তনালির ব্লকড হওয়া থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
লেখক : ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান
ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ।