কিডনি রোগীদের করোনা সংক্রমণে মৃত্যুঝুঁকি বেশি

সংগৃহীত ছবি

বিএসএমএমইউতে সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

কিডনি রোগীদের করোনা সংক্রমণে মৃত্যুঝুঁকি বেশি

অনলাইন ডেস্ক

‘কিডনি রোগীদের করোনা সংক্রমণের  ফলাফল খুব খারাপ। করোনা আক্রান্ত ডায়ালাইসিস রোগীদের ৫০ ভাগের মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০ গুণ বেশী। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের (সিএপিডি) রোগীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অনেক।

কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি ৫০ ভাগ। ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের কোভিড টিকার কার্যকারিতা অনেক কম, তবে ডায়ালাইসিস রোগীদের কার্যকারিতা ৮৭ ভাগ। ইতিপূর্বে সুস্থ্য হওয়া নেফ্রাইটিস রোগীরা এই টিকা নিলে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে। ’

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) করোনার দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব নিয়ে ‘মাল্টিটিউড অব ইস্যুজ ইন কোভিড : রেনাল, কার্ডিয়াক এন্ড মেটাবোলিক ইনফ্লুয়েন্স’ এবং ‘লং টার্ম হেলথ কনসিকোয়েন্সেস অ্যাজ এ পোস্ট কোভিড-১৯ সিকোয়াল ইন হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার্স’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে গবেষণাভিত্তিক এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত এই সিম্পোজিয়ামের আয়োজক কিডনি ডিজিজ রিসার্চ গ্রুপ।

সিম্পোজিয়ামে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে ২০২২ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ৮০৪ জন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর একটি প্রাথমিক গবেষণা পরিচালিত হয়।  

এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনা আক্রান্তদের ১২ শতাংশ ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তাদের এ অবস্থা থেকে চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসকদের ৪০ ভাগ চিকিৎসক এবং ৩৪ ভাগ নার্স লং কোভিডে ভুগছেন। যাদের ডায়াবেটিস ছিল না, করোনার প্রভাবে তাদের ডায়াবেটিস ও মায়োপ্যাথি হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী বলেন, ‘কোভিড শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড রয়েছে। কোভিডের সংক্রমণের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। ’ 

অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু সালেহ আহমেদ, বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কানসালট্যান্ট ডা. মীর ইসারাকুজ্জামান একটি করে গবেষণা প্রকাশ করেন। গবেষণা ফল প্রকাশ করেন অধ্যাপক ডা. মাসুদ ইকবাল।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিপল কৃষ্ণ অধিকারী। প্যানেল অব এক্সপার্ট ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বারডেমের অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান, অধ্যাপক ডা. এম আইয়ুব  আলী চৌধুরী প্রমূখ।

সিম্পোজিয়ামে আরো জানানো হয়, ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী অসংক্রামক রোগ। অন্যদিকে কোভিড নিউমোনিয়া একটি সংক্রামক রোগ। কোভিড হলে এই দুই ধরণের রোগের কিছু জটিলতা দেখা যায় এবং একটি রোগের দ্বারা অন্যটি প্রভাবিত হয়। তাই কোভিড নিউমোনিয়া হলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।  

অপরদিকে যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের কোভিডে জটিলতা বেশী হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, সব কোভিড আক্রান্ত রোগীর ১০ ভাগের ডায়াবেটিস আছে এবং এদের ১৫ ভাগের চিকিৎসাধীন থাকার  প্রয়োজন হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিআইসি’র পরামর্শ, যাদের ওজনাধিক্য, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কোভিডের টিকা গ্রহণ করবেন। তবে টিকা গ্রহণের সময় রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে; তবেই সুরক্ষা মিলতে পারে।

কোভিড পরবর্তী কিছু জটিলতা নিয়ে আসা রোগীদের পোস্ট কোভিড অথবা লং কোভিড সিনড্রোম বলা হয়। দুর্বলতা, গায়ে ব্যথা, মাথা ধরা ঘুম কম  হওয়া ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে কোভিড টিকা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড জটিলতা প্রতিরোধ অনেকাংশে সম্ভব।

news24bd.tv/desk

এই রকম আরও টপিক