শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ঘাটতি নেই: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী

শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ঘাটতি নেই: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

‘শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ পূণিমা রাতের চাঁদ দেখেনি। মন খুলে ধর্মপালনও করা যায়নি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কোনো ঘাটতি নেই; এটি চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে বড় বাধা ভূমি সমস্যার নিস্পত্তি।

পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। এজন্য কিছুটা সময় লাগবে। শান্তিচুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারব। গুটিকয়েক মানুষের বিরোধিতার কথা চিন্তা না করে দেশপ্রেমিক সকল মানুষকে সাথে নিয়ে শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে সে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
কুকিচিনের নামে যারা পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকণ্ডে চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ’

আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) পার্বত্য বিতর্ক উৎসব- ২০২৩ এর গ্র্যান্ড ফাইনালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও পরিচালনা করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

বীর বাহাদুর উশৈসিং আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শিল্প ও সংস্কৃতিকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে এখান শিক্ষাদিক্ষাসহ আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে। জুম চাষ লাভজনক না হওয়ায় সরকার ইক্ষ্যু চাষ, বাশের চারা রোপন, কাজু বাদাম চাষ, গাভী বিতরণ ইত্যাদি বিনা খরচে পাহাড়ি এলাকার মানুষের জন্য ব্যবস্থা করছে।  প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সার্টিফিকেটসহ যথাক্রমে নগদ ৩০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক এডুকেশন প্রোগ্রামের পরিচালক সাফি রহমান খান। ব্র্যাক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র যৌথ আয়োজনে এবং গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্স কানাডার সহযোগিতায় রাজধানীর বিএফডিসেতে আয়োজিত গ্র্যান্ড ফাইনালে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়কে পরাজিত করে রাঙ্গামাটির মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‌‘সফলতা অর্জনের জন্য দরিদ্রতা বড় অন্তরায় নয়’। প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ বক্তা হয় মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের দলনেতা সুজাতা চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি জনপদের মানুষ। এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষগুলো অতি সাধারণ জীবন-যাপন করে। বেশির ভাগ পাহাড়ি মানুষই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্ভর করে। কৃষি কাজ প্রধান পেশা হলেও এখনও তাদের ভূমির মালিকানা নিশ্চিতকরণে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ।  

পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন।  সুপারিশগুলো হচ্ছে- 
১) পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের বিশ্বাস ও ভ্রাতৃত্ত্ববোধ দৃঢ় করতে আরও বেশি প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
২) পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে উচ্চ শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা পুনঃবিবেচনা করা।

৩) পার্বত্য অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশন কার্ড প্রদান করা।
৪) পার্বত্য তিন জেলাতে কমিউনিটি টুরিজ্যম সম্প্রসারন করার লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এর যৌথ প্রকল্প গ্রহণ করা।
৫) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ‚মি কমিশন কার্যকর করার জন্য ভ‚মি মন্ত্রণালয় কর্তৃক অষষড়পধঃরড়হ ড়ভ ইঁংরহবংং নির্দিষ্ট করা।

৬) পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনাখরচে কর্মসংস্থানের নিমিত্তে সরকারিভাবে প্রেরণে অগ্রাধিকার প্রদান করা।
৭) সকলের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করে রিমোর্ট এরিয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করা।
৮) ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দুপুরে টিফিনের ব্যবস্থাসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে অবৈতনিক শিক্ষা প্রদান করা।
৯) পার্বত্য এলাকায় মহিলা উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্যে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান ও দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ আয়োজন করা।

১০) সরকারিভাবে প্রতিবছর পার্বত্য বিতর্ক উৎসব আয়োজন করা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য বিতর্ক উৎসাবের চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ দলের জন্য ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা প্রদান করেন। চ্যাম্পিয়ন দল মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ের তার্কিকরা হলেন, দময়ন্তী চাকমা, সুরভী চাকমা ও সুজাতা চাকমা এবং রানারআপ দল নাইক্ষ্যংছড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের তার্কিকরা হলেন মাওয়েচিং চাক্, খোবরাতুল আইন তাহমিন ও সোমাইতা সাদাফ মুমু। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সিনিয়র সাংবাদিক আবুল খায়ের, সাংবাদিক ইশরাত জাহান উর্মি, সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয় ও সাংবাদিক নীল মাহাবুব।