মুসার বাপ মরে গেছে পনের বছর আগে। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সন্তান মুসা। তার নিজেরও আট বছরের একটা ছেলে আছে। বড় ভাই হিসেবে সবাইকে দেখে রাখত সে।
সোমবার সন্ধ্যায় মুসা সরকারের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাসায় এনে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
একমাত্র নাতি তাছিন সরকারকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন মুসার মা মাজেদা বেগম। কিন্তু তাছিন নীরব। কান্না করতে করতে স্তব্ধ হয়ে গেছেন মুসার স্ত্রী মিনা বেগম।
মিনা বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি (রবিবার )সকালে ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী রাজশাহীতে জনসভায় অংশগ্রহণ করতে যায়। তাছিনের বাপ বলল, জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। আমি নেত্রীকে দেখতে রাজশাহী যাচ্ছি। তোমরা ভালোভাবে থাইকো।
তারপরে বাসে চড়ে সে রাজশাহীতে যায়। মাগরিবের নামাজের সময় ফোনে রাজশাহী থেকে সে জানায়, সে ভালো আছে। জীবনের প্রথম ট্রেনে উঠবো। ট্রেনেই নাটোর ফিরবো। এটাই ছিল তার সাথে শেষ কথা। রাত নয়টার দিকে ফোন আসে ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গেছে। সকালে খবর পাই তিনি আর নেই।
আওয়ামী লীগ কর্মী মুসার বাড়িতে কথা হয় সেদিন বিশেষ ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রী একই গ্রামের রেজাউল করিম এবং সুজন নামের দুই যুবক। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা শেষে বিশেষ ট্রেনটিতে নেতাকর্মীদের চাপে উপচে পড়া ভিড় ছিল। ট্রেনের ছাদেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না। আমরা অনেক কষ্টে ছাদে চড়ি। বিশেষ ট্রেনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসলে হঠাৎ ছাদে তাদের পাশ থেকে মুসা নিচে পড়ে যান। সে সময় তাঁরা চেষ্টা করেও ট্রেনটি থামাতে পারেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মুসাকে মৃত ঘোষণা করেন ।
ছাতনী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, তিনিও ওই বিশেষ ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জীবনে প্রথমবার স্বচক্ষে দেখে মুসা খুব আনন্দ পেয়েছিল। আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত কর্মী ছিলো সে। দুর্দিন-সুদিনে দলের যে কোনো কর্মসূচিতে সব সময় প্রথম কাতারে থাকতো সে।
মুসার বাসায় কথা হয় ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে মুসা ছিলেন বড়। সব বোনদের বিয়ে দিয়েছে সে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সবাইকে দেখে রাখার দায়িত্ব ছিল তাঁর। সে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অন্যের বাড়িতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইচ্ছা থাকলেও কখনো দলের নেত্রীকে সরাসরি দেখতে যেতে পারেননি। বিনা খরচে রাজশাহীতে যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন দলের দায়িত্ব পরিবারের পাশে বিশেষ করে মুসার একমাত্র শিশু সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর।
গ্রামবাসী জানান, মুসার পরিবারকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।
news24bd.tv/আজিজ