২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি মোংলার আগুন, ক্ষতি ১৫০ কোটি টাকা

২১ ঘণ্টায়ও নেভেনি মোংলার আগুন, ক্ষতি ১৫০ কোটি টাকা

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডে ভারতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ভিআইপি কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায়ও নেভেনি। সাড়ে ২১ ঘণ্টা পরও কারখানার ভেতরে থেকে থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে দপ-দপ করে আগুন জ্বলে উঠছে। এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের কর্মীরা।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় ১ লাখ ১১ হাজার বর্গফুটের বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানটির এক নম্বর ইউনিটে আগুন লাগে।

আগুন লাগার পর রপ্তানি পণ্য লাগেজ তৈরির এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৭০০ শ্রমিক দ্রুত বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও সম্পূর্ণ কারখানাটি পুড়ে ১৫০ কোটি টাকার সম্পদ ছাই হয়ে গেছে।

বুধবার রাতে এই ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে মোংলা থানায় কারখানাটির পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।  

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোংলা ইপিজেডের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (হিসাব) আবুল হাসান মুন্সিকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মোংলা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভিআইপি কারখানার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান জানান, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় মোংলা ইপিজেডে ভিআইপি কারখানায় ৯টি ইউনিটের মধ্যে ১ নম্বর কারখানাটিতে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মাংলা বন্দর, মোংলা ইপিজেড, নৌবাহিনী, বাগেরহাট, রামপাল, ফকিরহাট ও খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে গেলেও ততক্ষণে কারখানাটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। কারখানাটিতে থাকা লাগেজ তৈরির কাঁচামাল, মেশিনারী ও বিপুল পরিমান তৈরি করা লাগেজ ছিল। যা বেশ কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রে রপ্তানির অপেক্ষায় ছিল। এ ছাড়া এ কারখানায় রাসায়নিক আঠা, পলিথিনজাতীয় দাহ্য পদার্থ এবং হাই ভোল্টেজ মেশিনারিজ যন্ত্রপাতিও সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়ে মোট ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি উল্লেখ করে মঙ্গলবার রাতে মোংলা থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে। তবে, আগুন লাগার পর ১ লাখ ১১ হাজার বর্গফুটের এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৭০০ শ্রমিকের সবাই দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারায় কোন প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি। এখনও কারখানার ভেতরে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

মোংলা বন্দর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আরবেশ আলী জানান, ভিআইপি কারখানায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও বুধবার দুপুরেও কারখানাটির ভেতর থেকে এখনও কুণ্ডলী পাকিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে ধোঁয়া বের হয়ে আগুনের সৃষ্টি করছে। আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি। বুধবার সকল থেকে মোংলা বন্দর, রামপাল খুলনা ও বাগেরহাটের ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। এর আগে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মোংলা ইপিজেডের একটি সুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলেও জানান এই ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা।

মোংলা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ জানায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া ভারতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ভিআইপি ইন্ডাষ্ট্রি বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিডেট কারখানাটি ২০১৩ সালে মোংলা ইপিজেডে যাত্রা শুরু করে। শুরুতেই কারখানাটির ৬টি ইউনিট দিয়ে পণ্য উৎপাদনে যায়।

পরে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার বর্গফুটের এই প্রতিষ্ঠানটির ৯টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এসব কারখানায় ব্যাগ ও লাগেজ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।

মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহাবুব আহমেদ সিদ্দিক জানান, মোংলা ইপিজেডের ভেতরে ভিআইপি কারখানার আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি। কারখানাটিতে আগুন লেগে ভিআইপির অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় মোংলা ইপিজেডের অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক (হিসাব) আবুল হাসান মুন্সিকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সহয়তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কমিটি তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।
news24bd.tv/তৌহিদ