ব্যান্ডেজ রেখেই প্রসূতির পেটে সেলাই!

প্রসূতি তাহমিনা খাতুন

ব্যান্ডেজ রেখেই প্রসূতির পেটে সেলাই!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

যশোরের চৌগাছার পল্লবী ক্লিনিকে এক প্রসূতির পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাক্তার সুব্রত কুমার বাগচী ও ডাক্তার নাহিদ সিরাজ ওই ক্লিনিকে রোগীর সিজারিয়ান অপারেশন করেন।

ভুক্তভোগীর নাম তাহমিনা খাতুন (২৫)। তিনি চৌগাছা উপজেলার দিঘলসিংহা গ্রামের জয়নাল আবেদিনের মেয়ে।

তাহমিনার স্বামীর নাম আলমগীর হোসেন।

রোগীর স্বজনেরা জানান, সিজারের দেড় মাস পরও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ক’দিন আবারো তাকে পল্লবী ক্লিনিকে নেয়া হয়।

সেখানে তার জরায়ু নাড়ি দু’বার ওয়াস করা হয়। এক পর্যায়ে জরায়ুমুখ দিয়ে রক্তাক্ত মফ (ব্যান্ডেজ) বের হয়।

এ সময় ক্লিনিক মালিক রোগীর স্বজনদের আশ্বস্ত করে জানান, ‘তেমন কোনো সমস্যা নেই। বাড়ি নিয়ে যান ঠিক হয়ে যাবে। ’তবে অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় স্থানীয় এক গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে যন্ত্রণায় কাতর তাহমিনাকে গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার) যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

news24bd.tv

তাহমিনার মা জাহানারা খাতুন ও স্বামী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই চৌগাছা শহরের পল্লবী ক্লিনিকে তাহমিনাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক সুব্রত কুমার বাগচী ও নাহিদ সিরাজ সিজার করেন। ’

তারা বলেন, ‘সিজারের পর ওষুধ দিয়ে বাড়িতে নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা এবং আস্তে আস্তে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান। কিন্তু দেড় মাস হতে চললেও প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ক্লিনিক মালিককে জানানো হয়। ’

‘এরপর গত রোববার (২ সেপ্টেম্বর) তাকে আবারো ওই ক্লিনিকে নেয়া হয়। এ সময় ক্লিনিক মালিক মিজানুর রহমান তাদের কাছ থেকে বন্ড সই নিয়ে তাহমিনার জরায়ু নাড়ি দু’বার ওয়াস করান। পরে বাথরুমে গেলে তার জরায়ু মুখ দিয়ে অপারেশনের সময়ে ব্যবহার করা রক্তাক্ত মফ (ব্যান্ডেজ) পড়ে। সেটি নিয়ে হাসপাতাল মালিককে দেখালে, তিনি সেটি নিয়ে নেন। ’

তবে তাহমিনার স্বামী আলমগীর ব্যান্ডেজের ছবি নিজের মোবাইলের ক্যামেরায় ধারণ করে রাখেন।

শুক্রবার চৌগাছার একটি প্রাইভেট চেম্বারে গাইনি কনসালট্যান্ট ডাক্তার রবিউল ইসলামকে তাহমিনাকে দেখানো হয়। চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের বলেন, রোগীর পেটের মধ্যে আরও কিছু থেকে যেতে পারে। এজন্য পিপি করাতে রোগীকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন তিনি।

তাহমিনার মা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছিলাম। সেখানকার চিকিৎসকরা বলেছিলেন সিজারের ডাক্তার নেই। বাইরে কোথাও নিয়ে যান, রোগীর অবস্থা ভাল না। তাই হাতের কাছে পল্লবী ক্লিনিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ৮ হাজার টাকা খরচায় মেয়ের সিজার করা হয়। কিন্তু দেড় মাসেও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। মেয়ের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। অপারেশন আর ওষুধ বাবদ এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মেয়ে আমার সুস্থ হয়নি। ’

তিনি বলেন, ‘ক্লিনিক মালিক প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্টের কাগজপত্র রেখে দিয়েছেন। মেয়ে এখন সদর হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। ’

তবে পল্লবী ক্লিনিকের মালিক মিজানুর রহমান তাহমিনার পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারির রোগীরও রক্তক্ষরণ হতে পারে। ফলে সিজারিয়ান রোগীর রক্তক্ষরণ অস্বাভাবিক নয়। রোগীকে ক্লিনিকে আনা হয়েছিল, তার চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ’

তবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দেখা মেলে নি।


অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর