স্বামী-স্ত্রীর মাদক চক্রে ১০-১২ জন তরুণী

সংগৃহীত ছবি

স্বামী-স্ত্রীর মাদক চক্রে ১০-১২ জন তরুণী

অনলাইন ডেস্ক

গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নওগাঁ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইনসহ তিনজন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে দুইজনই নারী মাদক কারবারি রয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে ১০ থেকে ১২ জনের একটি মাদক চক্র গড়ে তুলেছেন। ওই চক্রের মূলহোতা উঠতি বয়সের তরুণীদের মাধ্যমে কৌশলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবার পারিচালনা করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।  

তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১২ এর অভিযানে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এবং নওগাঁ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মাদক কারবার চক্রের অন্যতম মূলহোতা মো. শাকিবুর রহমান ওরফে শাকিব (৩৫), তার সহযোগী মোসা. রাজিয়া খাতুন (৩৩) ও মোসা. সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনাকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

যার বাজার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।  

সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনা শাকিবের স্ত্রী। সে তার স্বামীর মাদক কারবারের সহযোগী। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা হেরোইনের একটি অংশ শাকিব নিজ বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে রাখত। বিভিন্ন সময় তাদের আস্থাভাজন মাদক কারবারিরা তাদের বাড়িতে হেরোইন সংগ্রহ করতে আসলে সেলিনা তাদের হেরোইন সরবরাহ করত। এছাড়া রাজিয়া শাকিবের হেরোইন চক্রের অন্যতম সহযোগী। সে প্রায় এক বছর যাবত এই হেরোইন কারবারের সাথে জড়িত। সে রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হেরোইন সরবরাহ করত। সে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার শাকিবের সাথে তার মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন স্থানে হোরোইন সরবরাহ করেছে। পূর্বের ন্যায় সে গতকাল শাকিবের সাথে গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে হেরোইন সরবরাহ করার জন্য নওগাঁ থেকে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।

খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই চক্রটি পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে নদীপথে প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি হেরোইন নিয়ে আসে। মাদক পরিবহনের কৌশল হিসেবে শাকিব নারী সদস্যদের ব্যবহার করত। তাদের মাদক কারবার চক্রে ১০-১২ জন সক্রিয় নারী সদস্য রয়েছে। তারা চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিয়ত ৫০০/৬০০ গ্রাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দিত। প্রত্যেকটি চালান পরিবহনের জন্য তারা বহনকারীকে ১৫-২০ হাজার টাকা প্রদান করত। মাদক চালানের পরিমাণ বেশি থাকলে শাকিবুর বিভিন্ন সময় তার নিজের মোটরসাইকেলযোগে পরিবহন করত। এই চালানে ৩ কেজির বেশি হওয়ায় শাকিব নিজেই বহনকারীর সাথে এসেছিল।

এছাড়া শাকিবুর তার নওগাঁস্থ বাসায় আরও ২ কেজি হেরোইন থাকার ব্যাপারে তথ্য দেয়। পরবর্তীতে তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তার স্ত্রী সেলিনা খাতুনের হেফাজত থেকে ২ কেজি হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শাকিব এই চক্রের অন্যতম হোতা। ইতোপূর্বে সে চুরির সাথে জড়িত ছিল এবং এলাকায় তার বিরুদ্ধে একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সে প্রায় দুই বছর যাবত মাদক কারবারে সাথে জড়িত। সে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে তার ব্যবসায়িক সহযোগীর মাধ্যমে হেরোইন সংগ্রহ পূর্বক প্রথমে নিজের বাড়িতে সংরক্ষণ করত। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করত। বিভিন্ন সময় সে নিজের মোটরবাইকে করে বিভিন্ন স্থানেও পরিবহন করত। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ এবং কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারিদের কাছে হেরোইন সরবরাহ করত। সে হেরোইন বিক্রির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংগ্রহ করত। এছাড়া বিভিন্ন সময় হাতে হাতে এবং আস্থাভাজন মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট হতে মাদক বিক্রির পর সুবিধাজনক সময়ে সংগ্রহ করত। তার নামে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।  

news24bd.tv/আলী