অন্তর্বাস পোড়ানোর সেই আন্দোলনের সত্য-মিথ্যা

১৯৬৮ সালের সেই বিক্ষোভ। ছবি: GETTY IMAGES

অন্তর্বাস পোড়ানোর সেই আন্দোলনের সত্য-মিথ্যা

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিজের অন্তর্বাস খুলে রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছিলেন শত শত নারী। নারীবাদীদের সেই আন্দোলন সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। ৫০ বছর পরে আবারও সেই আন্দোলনের ঢেউ দেশটির সমাজ-রাজনীতিকে আন্দোলিত করছে। যুক্তরাষ্ট্রে নারী অধিকার আন্দোলন ফের সংবাদের শিরোণামে।

নারীদের মিছিল এবং 'মি-টু' আন্দোলন আবারও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে নারীবাদী আন্দোলনে। ৫০টি রাজ্যের নির্বাচনে এবার রেকর্ড সংখ্যাক নারী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে।  

তবে কথা সেখানে নয়। পঞ্চাশ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে 'মিস আমেরিকা' সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে নারীদের সেই প্রতিবাদের যে চিত্র মানুষের মনে গেঁথে আছে, তার সত্যতা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

এতদিন সবাই জেনে এসেছে, ওইদিন শতাধিক নারী তাদের অন্তর্বাস পুড়িয়ে প্রতিবাদে নেমেছিল। নিজেকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করার প্রতীকী প্রতিবাদস্বরূপ নারীবাদীরা সড়কে নেমে এসে একে একে খুলে ফেলে নিজেদের অন্তর্বাস। সেগুলো ছুড়ে ফেলে পাশে রাখা 'ফ্রিডম ট্র্যাশ ক্যানে'। এরপর সেই ক্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এতদিন পর সেই ধারণায় ছেদ টেনেছেন সেদিনের আন্দোলনের অন্যতম এক প্রতিবাদী মুখ রবিন মর্গান।

তিনি বলেন, সেদিনের প্রতিবাদের যে ছবিটা জনমানসে গেঁথে গিয়েছিল, তা হচ্ছে নারীবাদীরা তাদের ব্রা পুড়িয়ে ফেলছে! যেটি আসলে বাস্তবে ঘটেইনি। কিছু নারী তাদের অন্তর্বাস খুলে 'ফ্রিডম ট্র্যাশ ক্যানে' ছুঁড়ে ফেলেছিলেন সেটা সত্যি। কিন্তু তারা সেগুলো পোড়াননি। আসলে একজন মহিলা সাংবাদিকের এক রিপোর্টের লাইন থেকে এই কল্পকাহিনীর শুরু ।

কী সেই লাইন। তিনি লিখেছিলেন, "পুরুষরা তাদের ড্রাফট কার্ড পোড়াচ্ছে, এরপর কী? মেয়েরা কি তাদের ব্রা পোড়াবে?"

সেই থেকেই জল্পনা বাড়তে বাড়তে ভিন্ন চেহারা নেয়।  

রবিন মর্গান দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেন, ব্রা পোড়ানোর কোন ঘটনাই সেদিন ঘটেনি। এটা একটা কল্পকাহিনী। আমরা বহু বছর ধরে এটিকে খন্ডনের চেষ্টা করছি।

মর্গান বলেন, আমার মনে আছে এক তরুণী তার ব্রা খুলে ফেললো। শার্টের নীচ থেকে সে তার ব্রা খুলে বের করে আনলো তারপর সবার উল্লসিত চিৎকারের মধ্যে সেটি ছুঁড়ে ফেললো। তবে ব্রা পোড়ানোর কোন ঘটনা সেদিন ঘটেনি।

অন্তর্বাস পোড়ানো হোক বা না হোক, সেই আন্দোলন যে নারীবাদের কণ্ঠকে শক্তিশালী করেছিল তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সত্যিকারের নারীবাদী আন্দোলনের ঢেউ সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন। যদিও এর আগে থেকেই ন্যাশনাল অর্গেইজেশন ফর উইমেনের মতো নারীবাদী সংস্থা ছিল।

সেদিনের আন্দোলনে শুধু অন্তর্বাসই নয়, প্রতিবাদ জানাতে অনেক নারী ঘর মোছার মপ, লিপস্টিক, হাই হিল জুতো ছুড়ে ফেলেন ময়লার ঝুড়িতে। তাদের কাছে এসব ছিল নারীর পরাধীনতার প্রতীক। সেদিনের সেই আন্দোলনের ৫০ বছর পর যদিও নারীর পা থেকে হাই হিল জুতো সরে যায়নি, ব্যাগ থেকে লিপস্টিকও উধাও হয়ে যায়নি, তবে বেগবান হয়েছে নারী আন্দোলন। নানা ইস্যুতেই এখন নারীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। রাষ্ট্রকে বাধ্য করে বৈষম্যমূলক অনেক নীতি পরিবর্তনে।

কেন সেদিন শত শত নারী নিজের অন্তর্বাস খুলে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল? কেন ছুড়ে ফেলেছিল হাই হিল জুতো, লিপস্টিকের মতো রূপচর্চা সামগ্রী?

মূলত 'মিস আমেরিকা' সুন্দরী প্রতিযোগিতা ঘিরেই আন্দোলনের সূত্রপাত। ১৯২১ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পর একজন কৃষ্ণাঙ্গও কোনদিন এর ফাইনালে পৌঁছায়নি। আর এর পেছনে ছিল বর্ণবাদ। ১৯৬৮ সালে যখন এ আন্দোলন গড়ে ওঠে তখনও 'মিস আমেরিকা' সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কেবল বিশেষ ধরণের নারীর সৌন্দর্যকেই বিবেচনায় নেওয়া হতো। যদিও 'প্রতিযোগীদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও শ্বেতাঙ্গ হতে হবে'- এই নিয়ম অবশ্য ততদিনে পাল্টেছে। কিন্তু, সেটা ছিল শুধু কাগুজে। বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। মিস আমেরিকা প্রতিযোগিতায় তখনো পর্যন্ত কোন কৃষ্ণাঙ্গ নারী জিততে পারেননি। কখনো কোন পুয়ের্তোরিকান, আলাস্কান, হাওয়াইয়ান বা মেক্সিকান আমেরিকান এতে জেতেনি। এমনকি একজন সত্যিকারের মিস আমেরিকান, অর্থাৎ ইন্ডিয়ান আমেরিকানও নয়।

ট্র্যাশ ক্যান বিক্ষোভের একটি প্রেস রিলিজে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছিল।  

সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা যে দশটি আপত্তি তুলে ধরেছিলেন, বর্ণবাদ ছিল তার একটি। এছাড়া হাই হিল জুতো, আন্ডারওয়্যার এবং সহিংসতায় ভরা পর্ণোগ্রাফিও ছিল সেই তালিকায়। ছিল ওপিয়ডের মতো ড্রাগ এবং ডায়েট পিলও।

মর্গানের মতে এগুলো নারীকে পুরুষের অধীন রাখার আয়োজন ছাড়া আর কিছুই নয়। সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত খবর