ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশও, সতর্ক থাকার পরামর্শ

সংগৃহীত ছবি

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশও, সতর্ক থাকার পরামর্শ

অনলাইন ডেস্ক

তুরস্ক ও সিরিয়া ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত। দেশ দুটিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার। বিশ্বের অপরাপর এলাকার মতো ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে এমন কোনো ভূমিকম্প হলে তা মোকাবেলায় প্রস্তুতির বিষয়টি ফের আলোচনায় এলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটলে কীভাবে তা মোকাবেলা করবেন তা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্প হওয়ার যে ভূতাত্ত্বিক গঠন ও অবস্থান থাকা দরকার, বাংলাদেশ সেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতেই রয়েছে। দেশে রিখটার স্কেলে ৬ থেকে সাড়ে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার উপযোগী ভূতাত্ত্বিক ফল্টসংবলিত ১৪টি স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটেই এমন পাঁচটি ফল্ট আছে।

এই ফল্ট থেকে যেকোনো সময় মাঝারি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।

আরও পড়ুন...আরও পড়ুন...বিশ্বের ভয়াবহ সব ভূমিকম্প 

২০২১ সালে পরপর কয়েকবার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সিলেট। ২০২২ সালে পাশের দেশে উৎপত্তি হওয়া ছোট ও মাঝারি ভূকম্পনে কেঁপেছে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলা। এসব ভূমিকম্পে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ভবিষ্যৎ দুর্যোগের শঙ্কা বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্পে বড় মাত্রার ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দেশের চারদিকে ভয়াবহ ভূমিকম্পবলয় তৈরি হয়েছে।  

আরও পড়ুন...ধসে পড়েছে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ

এ প্রসঙ্গে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ গবেষক মমিনুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্লেট টেকটনিক্স অবস্থানের মধ্যে ইউরেশিয়ান, বার্মা মাইক্রেপ্লেট ও ইন্ডিয়ান- এই তিন প্লেট বাউন্ডারির সংযোগস্থল ও কাছাকাছি অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এ কারণে আমরা বড় ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছি। এ জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে মাটির নিচে থাকা গ্যাস ও বৈদ্যুতিক লাইনগুলোকে অটো শাটডাউন করার মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। ’

আরও পড়ুন...বিভিন্ন দেশ থেকে উদ্ধারকারী দল যাচ্ছে তুরস্কে

নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঝুঁকির দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা। কারণ এই শহরের ভবনগুলোর নির্মাণে ত্রুটি আছে। বেশিরভাগ ভবনই তৈরি হয়েছে জলাভূমি ভরাট করে। যেখানে মাটির সক্ষমতা যাচাই করা হয়নি। মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলেও এগুলো ভেঙে ব্যাপক প্রাণহানি হতে পারে। বলতে গেলে ভবন নির্মাণ বিধিমালা না মানার কারণে সব বিভাগীয় শহরই ঝুঁকিতে আছে। ’

আরও পড়ুন...তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প হবে, ৩ দিন আগেই জানিয়েছিলেন গবেষক

সুউচ্চ ভবনের পাশাপাশি মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জানিয়ে আদিল খান আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর এগুলো থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। অপরিকল্পিত ভবন ও সরু রাস্তাগুলোর কারণে ফায়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য উদ্ধার তৎপরতা চালানোও কঠিন হবে। তা ছাড়া ভূমিকম্পের সময় খোলা জায়গা না থাকা, মাঠ বা উদ্যান না থাকার কারণে ভবন ছেড়ে বের হয়েও দুর্ঘটনার হুমকিতে থাকবেন মানুষ। ’

আরও পড়ুন... তুর‌স্কে বাংলাদেশিরা যে নম্বরে কনস্যুলেটে যোগাযোগ করবেন

অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করলেও ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে দাবি করে বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ভূমিকম্পের সময় ও তারপর কী করণীয়, এ সম্পর্কে মানুষকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে। এ ছাড়া ভূমিকম্পের পর উপকূলীয় এলাকায় সুনামির আশঙ্কা থাকে, তাই পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও হাসপাতালগুলোকে স্বয়ংম্পূর্ণ করতে হবে।

আরও পড়ুন... যে কারণে তুরস্ক-সিরিয়ায় এত শক্তিশালী ভূমিকম্প

ভূমিম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের সবগুলো বাহিনী প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা করা হয়েছে। এটি মানা হলে দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। ’

news24bd.tv/ইস্রাফিল

এই রকম আরও টপিক