আইএমএফ’র ঋণ: অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে কত টাকা?

সংগৃহীত ছবি

আইএমএফ’র ঋণ: অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে কত টাকা?

অনলাইন ডেস্ক

ঋণের পুরো অর্থ পেতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আহরণের অনুপাত ৭ দশমিক ৮ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ফলে বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকার পরও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে। তবে শুধু সংস্থাটির শর্ত পূরণই নয়, ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য এ অনুপাত আরও বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। রাজধানীর বনানীতে সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘পিআরআই স্টাডি সেন্টার অন ডমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

রাজস্ব খাতে আইএমএফের শর্ত মেনে সরকারকে যেসব সংস্কার করতে হবে, সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

ড. রাজ্জাক বলেন, ‘আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ৭ দশমিক ৮ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩ শতংশে উন্নীত করতে হবে। এজন্য কী কী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা আগামী জুনের মধ্যে সংস্থাটিকে জানাতে হবে।

এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত আরো দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা আরো দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িয়ে উন্নীত করতে হবে সাড়ে ৯ শতাংশে। ’

পিআরআইয়ের এ গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে রাজস্বে যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে সেটি অব্যাহত থাকার পরও আইএমএফের শর্ত পূরণে সরকারকে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে। এর পরের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন শেষে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে হবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আইএমএমের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২৫-২৬) সরকারকে অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করতে হবে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ’

সরকারের মোট রাজস্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ আহরণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভাব হবে না বলেও জানান তিনি। ড. এমএ রাজ্জাক বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জন ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। কারণ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩১ সালে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য এর চেয়েও বেশি হারে রাজস্ব আহরণ প্রয়োজন। ’

উচ্চমধ্যম দেশে পরিণত হওয়ার জন্য সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সাল শেষে কর-জিডিপির অনুপাত সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। সুতরাং আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি অনুযায়ীও যদি সরকার শর্ত পূরণ করে তার পরও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকের লক্ষ্য অর্জন হবে না। তাই শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণই নয়, দেশের স্বার্থেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব বাড়াতে হবে। ড. রাজ্জাক বলেন, ‘বর্তমানে দেশে জিডিপির তুলনায় যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয় তা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়েই কম। এ কারণে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে পারে না। তাই অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। ’

রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই করছাড় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে রাজস্ব বাড়ানো যায়। এছাড়া দেশের আয়কর দিতে সক্ষম এমন প্রতিটি মানুষকে করের আওতায় আনা গেলে জিডিপি আড়াই থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। ’ তাই এ বিষয়ে এনবিআরকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে করপোরেট কর থেকেও আরো রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন পিআরআইয়ের এ গবেষণা পরিচালক।

করছাড় প্রসঙ্গে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঢালাওভাবে ছাড় প্রত্যাহার করা যাবে না। তবে কী পরিমাণ ছাড় দেয়া হচ্ছে তা নির্ধারণ করে প্রতিটি বাজেটে উপস্থাপন করা উচিত। একই সঙ্গে যেসব জায়গায় ছাড় প্রত্যাহার করা সম্ভব সে জায়গাগুলোয় ধীরে ধীরে ছাড় কমিয়ে আনা জরুরি। ’ রাজস্ব বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জিডিপির তুলনায় দশমিক ৫০ শতাংশ রজস্ব প্রবৃদ্ধি আপাতদৃষ্টিতে খুব বেশি মনে না হলেও বিদ্যামন রাজস্ব কাঠামোয় এটি অর্জন করা খুবই কঠিন। অন্যান্য দেশের বিভিন্ন খাতে করহার কম থাকায় প্রয়োজন হলেই তারা সেটি বাড়াতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বিদ্যমান করহারের পরিমাণই বেশি। তাই এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার ও মানসিকতার বদল করা না গেলে আইএমএফের শর্ত মেনে রাজস্ব খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য কঠিন হবে। ’

news24bd.tv/ইস্রাফিল