মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ

প্রতীকী ছবি

মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ

গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০

অনলাইন ডেস্ক

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে আবারও আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ককটেল ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ হয় বলে স্থানিয়রা জানিয়েছে।

দুই পক্ষের এক পক্ষে ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধার সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারী এবং অপর পক্ষে রয়েছেন একই উপজেলার আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও ইউনিয়নটির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসিনা হক।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নটির আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী এবং সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক পক্ষের মধ্যে এক যুগ ধরে বিরোধ চলে আসছে। সামান্য বিষয় নিয়ে প্রায় সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায় তারা। গত ২৪ জানুয়ারি মহসিনার সমর্থক জিয়া সরকার নামে একজনকে কুপিয়ে এবং গুলি করে আহত করে রিপনের ভাই শিপন পাটোয়ারী।

এরপর থেকে সমগ্র ইউনিয়নে উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে রিপন পাটোয়ারী লোকজন সঙ্গবদ্ধ হয়ে কংশপুরায়, মুন্সীকান্দি, বেহেরকান্দিনোয়াদ্ধা, লক্ষীদেবী ও ঢালিকান্দি গ্রামে হামলা শুরু করে। এসময় মহসিনা হক কল্পনার লোকজন প্রতিরোধ করতে গেলে  দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।  এক পর্যায়ে গ্রামে গ্রামে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, ককটেল বিষ্ফোরণ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এতে মুহূর্তেই গ্রামগুলো রণক্ষেত্রে পরিনিত হয়। এঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছে। আহতরা গ্রেফতার এড়াতে গোপনে হাসপাতাল, বিভিন্ন ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নেয়। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারীর দাবি তার এক সমর্থককে সকালে কুপিয়ে আহত করে কল্পনার লোকজন। তার পর থেকেই সংঘর্ষ বাধে ইউনিয়ন জুড়ে।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শৈবাল বসাক জানান, বিকেল চারটার দিকে সংঘর্ষের ঘটনায় চোখে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে দুজন হাসপাতাল আসে। ওই দুটি ছেলের চোখের মধ্যে লোহাজাতীয় কিছু আটকা ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  

মহসিনা হক অভিযোগ করে বলেন,আমাদেরকে গ্রাম থেকে বিতারিত করতে হামলা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ দিকে কংস পুরা এলাকায় আমাদের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা করা হয়। সেখানে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ৮-১০ টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণ করে। ককটেল বিস্ফোরণ  ও তাদের পক্ষের ছোড়া গুলিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা কার কাছে বিচার চাইব। কয়েকদিন পর পর এমন ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার ওসি, সদর সার্কেল সহ পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তাদের সামনেই আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করা হলো। এর আগেও বিভিন্ন সময় আমার কর্মী সমর্থকদের মারধর করে গ্রাম ছাড়া করেছে। এছাড়াও তার আপন ছোট ভাই শিপনের একটি মাইক্রোবাস ক্যাডার বাহিনী আছে যারা আমার কর্মী সর্মথকদের তুলে নিয়ে কুপিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়। তাই তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী মহসিনা হকের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করেন।

তিনি বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে মহসিনার লোকজন সংঘর্ষের পাঁয়তারা করছিল। আমাদের লোকজনকে তারা মারধর করেছে। এ নিয়ে আমরা থানায় দুটি অভিযোগ করেছি। মঙ্গলবার সকালে খাস মোল্লাকান্দি এলাকায় এক সমর্থককে কুপিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে আমাদের লোকজন একত্র হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আমাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।  

মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান বলেন, কয়েকদিন যাবত ওই দুপক্ষের মধ্যে  উত্তেজনা চলছিল। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনো পক্ষ থেকে এখনও অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশের হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজ এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

news24bd.tv/তৌহিদ