হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ৩ আইনজীবী

সংগৃহীত ছবি

হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ৩ আইনজীবী

অনলাইন ডেস্ক

হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার লিখিত আবেদন করেছেন নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম ও আইনজীবী ফেরদৌস আলম। অপেশাদারিত্বমূলক, আক্রমণাত্মক ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি)  আদালতে হাজির হয়ে এ ক্ষমা চান তারা।  

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিষয়টি গণমাধ্যমকে বলেন, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন আমরা হাতে পেয়েছি।
 
আজ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

এর আগে ২৫ জানুয়ারি আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অপেশাদারিত্বমূলক, আক্রমণাত্মক ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ব্যাখ্যা দিতে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমকে তলব করেন হাইকোর্ট।

নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো পত্রে বলা হয়, গত ২৮ নভেম্বর আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।

আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করি এবং আসামির জামিন নামঞ্জুর করি। অপরাপর আসামিদের জামিন আবেদন এবং মেয়াদ বর্ধিতকরণ আবেদন না-মঞ্জুর পূর্বক জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিই।  এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ওই মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীরা অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণ করে এবং হামলা করার চেষ্টা চালায়।  

‘তারা হুমকি দিয়ে বলে, জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নেই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছ, আইন-কানুন জান না? নীলফামারীর বার খুবই ভয়ংকর। এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি।  কোথা থেকে এসেছ, এসেই উল্টা পাল্টা আদেশ দাও। ’ 

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনো তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিক এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করাকালীন জঘন্য ভাষায় বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহ-সভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। ওই সময়ে উপস্থিত অপরাপর আইনজীবীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন তাতে আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসাবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। ওই ঘটনার কারণে আমিসহ এই জেলার অপরাপর বিচারকরা নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এমতবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের সদয় মর্জি হয়। ’

গত ২৯ ডিসেম্বর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো অভিযোগপত্রটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন। গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। তার ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদেশের জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠে।

news24bd.tv/ইস্রাফিল