ভাষা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরত। দুনিয়ায় যত নবী-রসুল এসেছেন সবাই মাতৃভাষায় কথা বলতেন। মায়ের ভাষায় তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। বিপদগামী মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করতেন।
কারণ মাতৃভাষা মহান আল্লাহর এক বড় নিয়ামত। মানুষ সৃষ্টি করে আল্লাহ তাকে কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশের জন্য মাতৃভাষা দান করেছেন। তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।প্রত্যেক নবী-রসুলকে মাতৃভাষার বিশুদ্ধ জ্ঞান দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
মাতৃভাষা তার আবেগ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। সুরা রুমের ২২ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘তাঁর আরও একটি নিদর্শন হচ্ছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। ’ সুরা আর রাহমানের ১ থেকে ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহ মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃষ্টি করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা বর্ণনার কলাকৌশল। ’
সুরা ইবরাহিমের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকে তাঁর নিজ জাতির ভাষায় পাঠিয়েছি, যাতে তাদের আল্লাহর বিধানসমূহ সুস্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে পারে। ’ প্রত্যেক নবী-রসুল তাঁর মায়ের ভাষায় তাঁর জাতির কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। মায়ের ভাষার মাধ্যমেই মানুষকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
আল্লাহ হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে সুরা দুখানের ৫৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমি তো কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে নাজিল করেছি, যাতে তারা সহজে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। ’ আল কোরআনের সুরা আশ শুরার ৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- ‘এমনিভাবে আমি আপনার প্রতি আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল করেছি। যাতে আপনি মক্কা ও তার আশপাশের লোকদের হাশরের দিন সম্পর্কে সতর্ক করেন। ’ ভাষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ সুরা ইউসুফের ২ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি, যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পার। ’
সুরা মারিয়ামের ৯৭ নম্বর আয়াতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি অতি সহজে মুত্তাকিদের সুসংবাদ দেন আর কলহকারীদের সতর্ক করেন। ’ আল কোরআনের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, ইসলামী আদর্শ যেমন সর্বজনীন, তেমন ভাষা-বর্ণও সর্বজনীন। আল্লাহ আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।