অনাবৃষ্টিতে নাকাল অস্ট্রেলিয়ার শিশুরা

খরায় নাকাল দুই অস্ট্রেলিয়ান শিশু

অনাবৃষ্টিতে নাকাল অস্ট্রেলিয়ার শিশুরা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখেনি ওই অঞ্চলের মানুষ। এই খরা ও অনাবৃষ্টিকে বলা হচ্ছে ‘দ্য বিগ ড্রাই’।

নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রামাঞ্চলে এর জন্য সবচেয়ে বেশি ভুগত হচ্ছে সেই সব পরিবারকে, যাদের জীবিকা নির্ভর করে চাষাবাদ বা পশুপালনের ওপর।

অনাবৃষ্টির ফলে এসব পরিবারের শিশুদের জীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে। গ্রামীণ অনেক শিশুই জানিয়েছে, প্রচণ্ড ধুলার জন্য তাদের নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।  

 নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বহু এলাকায় গেল দু'বছর ধরে একফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি! আর এই অনাবৃষ্টি অস্ট্রেলিয়ার বহু কৃষক ও খামার পরিবারে বিরাট বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এর বিরূপ প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে ওই সব পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েদের ওপর।



news24bd.tv
অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে জলাশয়

৮ বছর বয়সী মাইকেল জানায়, ‘সবাই আজকাল খুব বিষন্ন, কারও মুখে হাসি দেখতে পাই না। বাবার সঙ্গেও আমাদের খুব কম দেখা হয়। কারণ তিনি সারাদিন পশুদের খাওয়াতে ও অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। ’

আসলে দীর্ঘদিন ধরে খরা চলার ফলে এই খামারি পরিবারগুলোর কাজ খুব বেড়ে গেছে। আর তার রেশ টের পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় স্কুলগুলোতেও।  

৯ম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, ‘এখন পড়াশুনার খুব চাপ। তাই খুব ভোরে উঠে আবার অনেক রাতে ঘুমাতে যেতে হয়। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে খামারের কাজ। কারণ গরুগুলোর ভালো যত্ন নিতে হয়। ’

তার বন্ধু পাশ থেকে বলে, ‘আগে আমি স্কুল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে হোমওয়ার্ক করতাম। এরপরেই বাইরে খেলতে বের হতাম। কিন্তু এখন আর তার কোনো সুযোগ নেই। কারণ গরুগুলোকে খাওয়াতে হয়। মাঠে তো কোনো ঘাসই নেই। শুধু ধুলা আর ধুলা-ওরা (গরুরা) খাবেটা কী?

ম্যানিলা সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক উইনড্রেড বলেন, ‘আমার স্কুলের বাচ্চারা আজকাল খুব বিষণ্ন থাকে। বাড়ির কথা বা চাষাবাদের কথা তুললেই তাদের চোখে-মুখে সেই বিষণ্নতা ফুটে ওঠে। ’

জোসেফাইন নামের এক শিশু জানায়, ‘ঘোড়া আর ভেড়াগুলো যখন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, তখন ভীষণ দুঃখ হয়। ওদের কিছু করার নেই-কারণ খাবারই যে নেই। ’শিশুটি বলে, ‘আমাদের অনেকগুলো ঘোড়ার ওজন খুব কমে গেছে। তিনটে বুড়ো ঘোড়াকে তো মেরেই ফেলতে হলো। কারণ আমরা ওদের খেতে দিতে পারছিলাম না।

স্থানীয় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক র‌্যাচেল  ফার্গুসনও বলেন, ‘আমাদের বাচ্চারা মানসিকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু ওদের পরিবারগুলো যে কী বিরাট আর্থিক চাপের মধ্যে দিয়ে, যাচ্ছে সেটা ওরা দিব্বি বোঝে। দুপুরের খাবার, পড়াশুনার খরচ এখন তাদের নিজেদেরই যোগাড় করতে হচ্ছে। ’

নিউ সাউথ ওয়েলস এখন বৃষ্টির জন্য কাতর হয়ে প্রার্থনা করছে। তবে সেখানে গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষকরা এটাও জানেন, আজকের এই বাচ্চারা একদিন আবহাওয়ার এই অনিশ্চয়তার ওপর ভরসা না করে পাকা চাকরি আর স্থিতিশীলতার আকর্ষণে শহরে পাড়ি জমাবে। আর এ জন্য তাদের কোনো দোষ দেওয়া যাবে না।



সূত্র: এবিসি, দ্য গার্ডিয়ান

অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর