ভালোবাসা, কামনা, বাসনা বাড়াতে করণীয়

প্রতীকী ছবি

ভালোবাসা, কামনা, বাসনা বাড়াতে করণীয়

অনলাইন ডেস্ক

দেহের যে গ্রন্থিটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাকে বলে পিটুইটারি গ্রন্থি। এই গ্রন্থির অবস্থান মধ্য মস্তিস্ক। এর আয়তন একটি মটর দানার মত। এই পিটুইটারি গ্রন্থিই যৌন গ্রন্থির কার্য নিয়ন্ত্রণ করে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অক্সিটোসিন হরমোনের কারণেই মানুষের মনে প্রেম, কামনা, বাসনা, আবেগ ইত্যাদি ক্রিয়াশীল হয়। সন্তান এবং বাবা-মায়ের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এই হরমোন। বন্ধন তৈরি করে ভালোবাসার মানুষের সঙ্গেও। শরীরের মনে ইতিবাচক অনুভূতি আনতেও এর প্রধান ভূমিকা।

মানে এক কথায় অক্সিটোসিন হল মানুষকে সুখী রাখার একটি দারুণ মাধ্যম।

ধীরে ধীরে অনুভূতিকে জাগায়
তবে কেউ যদি যদি মনে করে, অক্সিটোসিন হরমোন কারও শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে প্রেম, আবেগ, কামনাকে বাড়িয়ে তুলবে তাহলে কিন্তু ভুল হবে। এটি আসলে ধীরে ধীরে অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। কেননা, এটি স্বাভাবিক নিয়মেই শরীরের উৎপন্ন হয়।  
কিন্তু ওষুধ খেয়ে বা ইনজেকশন নিয়ে নিজের দেহের অক্সিটোসিন বাড়ানোর চেষ্টা করা যায় না। সুখ তৈরির এই হরমোনটিকে দেহের ভেতরে বাড়িয়ে তোলা যায় কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চললে। এজন্য করণীয় হতে পারে :

যোগাসন করুন
নিয়মিত যোগাসন করলে শরীর এবং মনের অনেক লাভ হয়। মনের উদ্বেগ, স্ট্রেস, অবসাদ ইত্যাদি কমে, ভালো ঘুম হয়, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা যোগাসনে অক্সিটোসিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গবেষণা বলছে, যাঁরা নিয়মিত যোগাসন করেন তাঁদের অক্সিটোসিনের মাত্রা অনেকটাই বেশি। সেকারণে তাঁদের মনের অসুখ কম হয়। বিশেষ করে সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য কোনও মানসিক রোগ নির্মূলে যোগাসনের জুড়ি মেলা ভার।

পছন্দের সঙ্গীত শুনুন
গবেষণা বলছে, পছন্দমতো সঙ্গীত, মিউজিক বা গান শুনলে শরীরের অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তা যে কোনও গানই হতে পারে। যিনি ধ্রুপদী সংগীত ভালোবাসেন তিনি তা শুনেই শান্তি পান, যাঁর রক মিউজিক পছন্দ তিনি শান্তি পান তাতেই। একেক জনের পছন্দ একেক রকম হলেও গান শোনাটা খুব দরকারি। আসলে পছন্দমতো গান শোনা মানে আপনি বিষয়টি উপভোগ করছেন। আপনার মন ভালো থাকছে। অর্থাৎ আপনার অক্সিটোসিন আরও সক্রিয় হচ্ছে।

মালিশ করুন
গবেষণা বলছে, শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকে সক্রিয় করতে মালিশ বা মাসাজের জুড়ি মেলা ভার। শরীরের পাশাপাশি মনের সুখকেও বাড়িয়ে তোলে এটি। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ায় অক্সিটোসিন হরমোনের সক্রিয়তা। বিশ্বাস না হলে মাত্র ১৫ মিনিট মাসাজ নিয়ে দেখুন শরীরের কামনা-বাসনা আরও তীব্র হয়ে উঠবে।  

যাঁরা নিয়মিত মাসাজ নেন তাঁদের শরীরের অক্সিটোসিনের মাত্রা অনেকটাই বেশি থাকে। ফলে শরীর, মন সতেজ থাকে। কাজে অধিক উৎসাহ আসে। অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়ায় তাঁরা পারদর্শী হন। বিশেষ করে যৌনসঙ্গমের ক্ষেত্রে তাদের পারফর্ম্যান্স হয় দুর্দান্ত। আর এক্ষেত্রে পেশাদার মাসাজের প্রয়োজন নেই বা ম্যাসাজ পার্লারে যাবারও দরকার নেই। নিজের স্ত্রী বা প্রিয়জনের হাতের ছোঁয়াই যথেষ্ট।

রোমান্টিক কথায় মাতুন
শরীরে অক্সিটোসিনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে প্রিয়জনের সঙ্গে রোমান্টিক কথা বলুন। একে অপরের প্রতি অনুভূতি, আকর্ষণ কিংবা ভালো লাগার বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। কথা বলুন পছন্দসই যৌনতা নিয়েও। প্রিয় মানুষকে মাঝে মাঝেই জড়িয়ে ধরুন, হাতে হাত রেখে আলতো চাপ দিন কিংবা চুমু খান। দেখবেন উভয়ের শরীরের অক্সোটোসিন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
শরীরের অক্সিটোসিনের মাত্রা বাড়াতে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত ভালো সময় কাটান। এতে মন ফুরফুরে থাকে। একা থাকলে এই অনুভূতি হয় না। তাই একাকীত্বের পরিবর্তে সকলের সঙ্গে খোলা মনে মিশুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে আপনার মনের আবেগ, ভালোবাসা, অনুভূতি, প্রেম ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ আপনার শরীরের অক্সিটোসিন ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছে।

ধ্যান বা মেডিটেশন করুন
নিয়মিত মেডিটেশন উদ্বেগ, অবসাদ, চিন্তাকে দূর করে মনকে হালকা করে দেয়। মনের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। আর এর প্রভাবে পিটুইটারি গ্রন্থির অক্সিটোসিন হরমোন আরও বেশি সক্রিয় হয়। নিয়মিত মেডিটেশন করুন। এবং নিজের প্রিয় মানুষটিকেও মেডিটেশনের অভ্যাস করান। দেখবেন প্রেম, ভালোবাসা, দয়া, মায়ার মতো অনুভূতিগুলি মনে আরও বেশি প্রকট হচ্ছে।

শোনার অভ্যাস করুন
শরীরের অক্সিটোসিন হরমোন সক্রিয় করার আরেকটি ভালো উপায় হল কথা কম বলা। তাই কম বলুন, শোনার অভ্যাস করুন। নিজের সমস্যার কথা বলে অন্যকে বোর করার চেয়ে অন্যের সমস্যা শুনে তা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। এতে কথা বলা কম হলো, আবার পরোপকারও করা হল। সঙ্গী বা প্রিয় মানুষটি যখন নিজের কথা বলবেন তখন চোখে চোখ রেখে তা মন দিয়ে শুনুন। এই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলি অক্সিটোসিন সক্রিয় করতে সাহায্য করে।

সঙ্গমে মাত্রা বাড়ায়
স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসুখ বিশেষ করে অর্গাজমের সময় অক্সিটোসিন পর্যাপ্ত পরিমাণে সক্রিয় হয়ে ওঠে। গবেষণা বলছে, যৌনতাই অক্সিটোসিন বৃদ্ধির সেরা উপায়।  

শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুখি থাকুন
আসলে অক্সিটোসিনের প্রভাবে যেমন শরীর এবং মনে সুখের সৃষ্টি হয়, তেমনই শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুখি হলেই অক্সিটোসিন সক্রিয় হয়। তাই নিজেকে ভালো রাখতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন। ইতিবাচক কাজই জীবনকে ইতিবাচক করে তোলে। নতুন কোনও ইতিবাচক কাজে উৎসাহ দেয়। তাই জীবনটা ভালো কাজের জন্যই ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনি যেমন ভালো থাকবেন তেমনই ভালো থাকবে আপনার শরীর এবং মন। সক্রিয় হবে পিটুইটারি গ্রন্থির গুরুত্বপূর্ণ হরমোন অক্সিটোসিন।

news24bd.tv/desk

এই রকম আরও টপিক