‘মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে যেতে চাই না’

কনক চাঁপা।

‘মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে যেতে চাই না’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বাংলা সংগীতের উজ্জল নক্ষত্রের নাম রোমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা। চলচিত্র, আধুনিক গান, নজরুল সঙ্গীত, লোকগীতিসহ সবধরণের গানে তিনি পারদর্শী। আজ ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ এই প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন। ১৯৬৯ সালের এই দিনে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণী এ সঙ্গীতশিল্পী আজ ৪৯ বছরে পা দিলেন। তবে জন্মদিনকে ঘিরে তিনি কখনোই কোনো বিশেষ আয়োজন করেন না বলে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে স্টাটাস দিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রতিটি কর্মদিবসই আমার জন্মদিন। কাজের মাঝেই এবং কাজের জন্যই আমার জন্ম।

আমি একজন আপাদমস্তক কন্ঠশ্রমিক।

জন্মদিন নিয়ে তিনি বলেন, জন্মদিন! সবাই একটা নির্দিষ্ট তারিখে জন্ম নেয়। কারো বাবা-মা সে তারিখ মনে রাখে, কারো বাবা-মা জন্ম দিয়ে বাচ্চা লালন করার তাগিদে সেই তারিখ ভুলে যান। আমি সৌভাগ্যবান কারণ আমার বাবা সে তারিখটি সযত্নে নিজ ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সেই তারিখে কেক কেটে মোম জ্বালিয়ে স্বজনদের দাওয়াত করে উৎসব পালনের রেয়াজ আমাদের পরিবারে ছিল না। যখন কিশোরী হয়ে উঠছিলাম তখন দুয়েক বছর বান্ধবী দের ডেকে মা পায়েস চানাচুর কেক নুডলস কলা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন বটে।

সাংসারিক ও কর্মজীবন নিয়ে তিনি বলেন, বিয়ে হয়ে গেল সেই কিশোরী থাকতেই। স্বামী একজন মিউজিক ডিরেক্টর। বলা যায় দুজনই বেকার। গান গাওয়ার জন্য বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারে যাওয়ার রিক্সা ভাড়া জোটানোও ভয়াবহ কঠিন কাজ ছিল! জীবন বাঁচাতে জীবিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে এই কিশোরী তখন দুবাচ্চার মা। তবুও গান গেয়ে যেভাবে মানুষের মনে নিজ পরিচয় নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তাতে এখনকার যুগ হলে স্টার হয়ে যেতাম। ইউটিউব এ ভিউ কোটির ঘর ছাড়িয়ে যেতো কিন্তু কখনোই বুঝতে সক্ষম হইনি যে আমার গান মানুষ শোনে বা আমি জনপ্রিয় কেউ! চুরাশি সালে পয়লা ছবির গান গাইলেও নব্বই দশকে ছবির গান গাওয়া নিয়মিত হল। তখন থেকেই জীবন আর আমার হাতে রইল না। জন্মদিন ভুলেই গেলাম। কত জন্মদিন মঞ্চে রেকর্ডিং স্টুডিওতে পার করেছি ইয়ত্তা নেই। কেউ জানতোও না মাইক্রোফোন এ দাঁড়ানো কন্ঠশ্রমিকের আজ জন্মদিন। যাদের আন্ডারে অর্থাৎ যে মিউজিক ডিরেক্টর দের সুরে গান গাইতে সারাদিন সারামাস স্টুডিওতে কাটিয়েছি, অথবা এফডিসির কেউ, তাঁরাও বলতে পারবেন না আমার জন্মদিন কবে। কখনো কোন পেপার পত্রিকার কাছ থেকে শুভেচ্ছা শুভকামনা পাইনি। ঘরের মানুষ ও প্রায় বছরই ভুলে গেছেন একথা। ভুলে যাওয়াটা নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই হয়েছে। কত জন্মদিন ফ্লাইট এ কাটিয়েছি, ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলে ফ্লাইটের তরফ থেকেও সে শুভাশিস পাইনি। ছেলেমেয়ে মেয়ে জামাই, আমার অনলাইন স্কুলের সন্তান সম ছাত্রছাত্রীরা, তারা যদিও জন্মদিন পালন করে এখন খুব আগ্রহভরে। কিন্তু এখন আর এইসব সেভাবে আমাকে টানে না।

জন্মদিন পালন করা অর্থহীন মন্তব্য করে তিনি লিখেন, যে মহামানব হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর জন্য এই পৃথিবীর জন্ম, তাঁর জন্মদিন মৃত্যু দিবস পালন যেখানে নিয়ম নাই, সেখানে আর কারো জন্মদিবস পালন অর্থহীন। যদিও সেপ্টেম্বর মাস এবং এগারো সংখ্যা আমার খুবই প্রিয়। হাজার হলেও আমি মানুষ, নিজেকে ভালোবাসি, তাই হয়তো এর বাইরে যাওয়ার সাধ্য আমার নাই। তবে আমি কখনোই আমার জন্মদিন এবং মৃত্যু দিন পালন করা হোক এ আমি চাই না।

নিজের বড় ইচ্ছেগুলোর কথা জানান কনক চাঁপা। লিখেন, এ বছর আমি ঊনপঞ্চাশ এ পা রাখব। কর্মহীন দীর্ঘ জীবন আমার খুবই অপছন্দ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে চাই, সুরের সঙ্গে ন্যায়ের সঙ্গে ভালো কাজের সঙ্গেই থাকতে চাই। আরো ভালো কিছু কাজ করতে চাই। এই আমার বড় ইচ্ছা। মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে যেতে চাই না একদমই। এটাও আমার বড় ইচ্ছা, মসজিদের পাশে কবর চাই এটাও আরেকটি সুপ্ত ইচ্ছা।

কারো কাছেই কোনো চাওয়া নেই উল্লেখ করে গুণী এ শিল্পী বলেন, সত্যিকার অর্থেই জন্মদিন এর প্রতি আলাদা কোনো দুর্বলতা আমার নেই; একথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই। আর আমি কোনো সেলিব্রিটি বা তারকা নই যে আমার জন্ম তারিখ কাউকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের উন্নতি করার জন্য আমি গান গাইনি, আমি গান গেয়েছি নিজের জীবিকার তাগিদে তাই দেশের মানুষের কাছে সুশীল সমাজের কাছে, সরকারের কাছে আমার কোনই চাওয়া নেই, আক্ষরিক অর্থেই এক ফোঁটাও চাওয়া পাওয়া নেই। জন্মদিন তো দূরের কথা।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর