ভূমিকম্প নিয়ে কিছু বিস্ময়কর তথ্য

ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে জলযান উঠে গেছে বাড়ি-ঘরের উপরে। ছবি: Getty Images

ভূমিকম্প নিয়ে কিছু বিস্ময়কর তথ্য

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

আজ বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮) সকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। কেঁপে উঠেছে ভারতের অনেক এলাকা। সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বেই ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বড় বড় ভূমিকম্প শুধু এক একটা শহর বা দেশকে মাটিতে মিশিয়েই দেয় না, ডেকে আনে সুনামির মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু। মুহূর্তে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এক একটা সভ্যতা। ভূমিকম্পের পরে এ নিয়ে নানা কথাবার্তা হয়। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ মোকাবেলায় তৎপরতা দেখা যায়।
পরে মানুষ আবার ভুলে যায়। ভূমিকম্প সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি কিন্তু সেটা কতটুকু? এমন অনেক বিস্ময়কর বিষয় আছে যা এখনো অনেকেরই অজানা। আসুন জেনে নিই তেমন কিছু তথ্য-

ভূমিকম্পে বদলে যেতে পারে দিনের দৈর্ঘ্য

শুনতে অবাক লাগলেও ভূমিকম্পের কারণে দিনের দৈর্ঘ্য বদলে যেতে পারে। ২০০৯ সালের ১১ মার্চ এমনই এক ঘটনা ঘটে। জাপানের উত্তর-পূর্বে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার একটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে পৃথিবীর ভরের বণ্টন এলোমেলো হয়ে যায়। তার প্রভাবে পৃথিবী দ্রুত গতিতে ঘুরতে শুরু করে। এতে দিনের দৈর্ঘ্য কমে যায়। সেদিন অন্য দিনের তুলনায় দিন ১.৮ মাইক্রো সেকেন্ড ছোট ছিল।

সরে যাচ্ছে সান ফ্রান্সিসকো শহর

ভূগর্ভে টেকটোনিক প্লেটের স্থানচ্যুতি, নড়াচড়া, ঘর্ষণ, শক্তি নির্গমনের কারণে সৃষ্টি হয় ভূকম্পনের। এর ফলে ভৌগলিক পরিবর্তন ঘটে। একটি শহর তার অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহর প্রত্যেক বছর গড়ে দুই ইঞ্চি করে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে সরে যাচ্ছে। শহরের এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে সান অ্যানড্রেয়াস ফল্টের দুটো দিক ক্রমশ একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই গতিতে চলতে থাকলে শহর দুটি কয়েক লাখ বছর পর একত্রিত হয়ে পড়বে। একইভাবে ২০১০ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বড়ো ধরনের এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিলো চিলির কনসেপসিওন শহরে। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৮। এর ফলে পৃথিবীর শক্ত উপরিভাগে ফাটল ধরে এবং শহরটি ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়।

পানি থেকে গন্ধ বের হয়
 
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পায় বন্যপ্রাণি। এসময় কিছু প্রাণির আচরণে পরিবর্তন ঘটে। ভূমিকম্পের আগে পুকুর, খাল-বিল, হ্রদ, জলাশয়ের স্থির পানি থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। এমনকি সেই পানি কিছুটা উষ্ণও হয়ে পড়তে পারে। প্লেট সরে যাওয়ার কারণে মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তার কারণে এই গন্ধ বের হয়। আর কিছু প্রাণি এটা আগেভাগে টের পায় কিছু। ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগ বলছে, ২০০৯ সালে ইতালিতে এক ভূমিকম্পের সময় এক ধরনের ব্যাঙ সেখান থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো এবং ফিরে এসেছিলো ভূমিকম্পের পরে। বলা হয়, এই ব্যাঙ পানির রাসায়নিক পরিবর্তন খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে।

প্রাণির আচরণে পরিবর্তন

ভূমিকম্পের সময় শুধু ব্যাঙেরই নয়, অন্য অনেক পশু-পাখির আচরণেই পরিবর্তন ঘটে। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উপকূলে সংঘটিত ভূমিকম্প ভয়াবহ সুনামি ডেকে আনে। মারা যায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ওই সময় তারা অনেক পশু-পাখিকে দেখেছেন উঁচু এলাকার দিকে ছুটে যেতে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন পশুপাখিরা টের পেয়ে যায়।

ভূমিকম্পের পরেও পানিতে ঢেউ উঠতে পারে

ভূমিকম্পের পরেও পুকুর কিংবা সুইমিং পুলের পানিতে ঢেউ উঠতে পারে। একে বলা হায় শ্যাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্প হয়তো শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তারপরেও কয়েক ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এই পানিতে তরঙ্গ অব্যাহত থাকতে পারে। মেক্সিকোতে ১৯৮৫ সালে এক ভূমিকম্পে মেক্সিকো থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের পানি ছিটকে পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গিয়েছিল।

৫০০ বছর আগেও ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়িঘর

বর্তমানে বাড়ি-ঘর নির্মানে ভূমিকম্প প্রতিরোধে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারপরও ধসে পড়ে বাড়িঘর। জাপানে ৫০০ বছর আগেও ইনকা আমলের স্থাপত্য ভবন ও জাপানি প্যাগোডা নির্মিত হয়েছিলো ভূমিকম্পের বিষয়টা মাথায় রেখে। ইনকার স্থাপত্য কর্মীরা তখন বাড়িঘর নির্মাণে একটি আদিকালের জ্ঞান কাজে লাগিয়েছিল। ঘন ঘন ভূমিকম্পের পরও সেই সব স্থাপত্য অক্ষত ছিল।

উচ্চতা কমে যায় পাহাড়-পর্বতের

ভূমিকম্পের কারণে পাহাড়-পর্বতের উচ্চতা কমে যায়। নেপালে ২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল ৭.৮ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে কমে যায় হিমালয়ের অনেক পর্বতের উচ্চতা। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কমে গিয়েছিল প্রায় এক ইঞ্চি।

ক্যাটফিশের কারণে ভূমিকম্প!

ভূমিকম্প নিয়ে দেশে দেশে, বিভিন্ন সভ্যতায় নানা বিশ্বাস ও কল্প কাহিনী প্রচলতি আছে। জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। অনেক জাপানি বিশ্বাস করেন, জাপানি এক দ্বীপে মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিলো নামাজু নামের বিশাল এক ক্যাটফিশ। পৌরাণিক কল্প কাহিনীতে বলা হয়, অনেক ভূমিকম্প হয়েছিল এই মাছটির কারণে।

প্রাচীন গ্রিকরা বিশ্বাস করতেন সমুদ্রের দেবতা পজিডন রেগে গিয়ে পৃথিবীর ওপর আঘাত করলে ভূমিকম্প হতো।

হিন্দু পুরাণে আছে এই পৃথিবীকে ধরে রেখেছে আটটি হাতি। এই হাতিগুলো দাঁড়িয়ে আছে একটি কচ্ছপের পিঠের ওপর। আর ওই কচ্ছপটি ছিলো কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা একটি সাপের উপরে। এই প্রাণীগুলোর যে কোনো একটি যখন নড়ে উঠতো তখনই ভূমিকম্প হতো।

বছরে পৃথিবীতে কতটি ভূমিকম্প হয়?
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে কয়েক লাখ ভূমিকম্প হয় সারা পৃথিবীতে। তবে এর বেশিরভাগই টের পাওয়া যায় না। কারণ সেগুলো মাত্রা থাকে খুবই কম। কিছু আবার হয় গভীর সমুদ্রে। কিছু হয় প্রত্যন্ত এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে, বছরে গড়ে ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় পৃথিবীতে। রিখটার স্কেলে এগুলোর মাত্রা থাকে সাতের উপরে। আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় একবার।

ভূমিকম্পের মূল উৎস প্রশান্ত মহাসাগর

পৃথিবীর মোট ভূমিকম্পের ৯০ শতাংশই হয় রিং অফ ফায়ার এলাকাজুড়ে। এই এলাকাটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।

সম্পর্কিত খবর