ছিনতাইকারী ধরে পুরস্কার পেলেন এই তরুণী

ছিনতাইকারীকে ধরে পুরস্কার নিচ্ছেন অন্তরা।

ছিনতাইকারী ধরে পুরস্কার পেলেন এই তরুণী

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

বনশ্রীর বাসা থেকে যাত্রাবাড়ীতে আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী অন্তরা রহমান। যাত্রাবাড়ীর জনপদের রোডে রিক্সায় যাচ্ছিলেন। এ সময় একজন ছিনতাইকারী তার হাতের ব্যাগটি নিয়ে দৌড় দেয়।

ঢাকার রাস্তায় ছিনতাই নতুন ঘটনা নয়।

অনেকেই এসব ঘটনায় আর সামনে এগোতে চান না।

ভয় না পেয়ে অন্তরা ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করেন। কিছুদূর গিয়ে সেই ছিনতাইকারী একটি চলন্ত বাসে উঠে পড়লে অন্তরাও সেই বাসটিতে উঠে পড়েন। খবর বিবিসির

১৭ অগাস্টের এ ঘটনা সম্পর্কে অন্তরা রহমান বলেন, বাসটি খালি ছিল।

আমি বাসে উঠে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে একটি লোক উঠেছে কি না। তারা বলে, আমাদের গাড়িতে ওঠে নাই। হয়তো পেছনের বাসে উঠেছে। কিন্তু পেছনের দিকে বসে থাকা একটি লোকের প্যান্ট দেখে আমার সন্দেহ হয়।

কাছে গিয়ে দেখি, সেই ছিনতাইকারী আমার ব্যাগের ওপর বসে আছে আর মোবাইলটা পায়ের নীচে রেখেছে। আমি তাকে ধরে চিৎকার করলেও বাস চালক বাসটি চালিয়ে যাচ্ছিল। চিৎকার শুনে কয়েকজন ছেলে এগিয়ে এসে বাসটি থামায়।

অন্তরা বলেন, তাকে ধরার পর চোর বলে আমাকে ছেড়ে দেন, আমি গতকালকেই কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছি। কিন্তু আমি মনে করলাম, গতকাল মুক্তি পেয়েই যে আজ অপরাধ করতে পারে, তাকে ছাড়লে অপরাধ হবে।

‌‘সবার সহযোগিতায় তাকে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে গেলাম। সেখানে আমি নিজেই বাদী হয়ে একটি মামলাও করলাম। ’

এই সাহসিকতার পুরস্কারও পেয়েছেন অন্তরা রহমান।

মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় তাকে পুরস্কৃত করেছে পুলিশ।

ডিএমপি কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ছিনতাইকারী তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেলে তিনি নিশ্চুপ না থেকে অত্যন্ত সাহস নিয়ে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। যা  প্রশংসনীয়। আশা করি এই সাহসী অন্তরার মত সকলে সাহসী হয়ে অপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন।

কিন্তু ছিনতাইকারীর পেছনে ধাওয়া করার সময় কোনো ভয় কি কাজ করেছিল?

অন্তরা রহমান বলেন, তখন এসব বিষয় মাথায় আসেনি। তখন শুধু আমার মনে হয়েছে, ওকে (ছিনতাইকারীকে) ধরতে হবে আর ওকে পুলিশে দিতে হবে।

এ সময় সেই ছিনতাইকারী নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি করছিল। কিন্তু অন্তরা কোনমতেই তাকে ছাড়েননি।

ডিএমপি মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বলছেন, এই অর্থমূল্য হয়তো বড় কিছু নয়। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা সবাইকে উৎসাহিত করছি, যাতে সবাই নিজেরা এভাবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসে।

ঢাকায় একটি ল ফার্ম চাকরি করেন অন্তরা রহমান।

ঢাকার বনশ্রীতেই মা, ভাই-বোনের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বাবা বিদেশে চাকরি করেন।

যখন পুলিশের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো, তখনো তিনি জানেন না যে, কোন পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করা হয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তরে গিয়ে যখন পুরস্কার পাওয়ার কথা জানলেন, তিনি খুবই অবাক হয়েছিলেন।

আমার মনে হয়েছিল ছিনতাইকারীকে ধরতে হবে, তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমি কখনো ভাবিনি, সেটা এতদূর হবে। সবার ভালোবাসা দেখে আমার ভেতর অনেক খুশী কাজ করছে। বলছেন অন্তরা রহমান।

তবে ছিনতাইকারীকে ধাওয়ার ঘটনায় বাসার লোকজন ভয় পেয়েছিল, যদি তার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো।

অন্তরা রহমান বলছেন, কিন্তু আমি এরকমই। ছোট বেলা থেকেই আমাকে কেউ টিজ করলে আমি রুখে দাঁড়াতাম। এরকম অন্যায় দেখলে আমি আবারো এভাবেই রুখে দাঁড়াব।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/ তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর