ভারত-পাকিস্তানের যে অনলাইন প্রেমের গল্প শেষ হল কারাগারে

সংগৃহীত ছবি

ভারত-পাকিস্তানের যে অনলাইন প্রেমের গল্প শেষ হল কারাগারে

অনলাইন ডেস্ক

চলতি বছর জানুয়ারি মাসে এক পাকিস্তানি নারীকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ এবং তাকে জাল পরিচয়পত্র পেতে সহায়তা করায় মুলায়াম সিং যাদব নামের এক ভারতীয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের পুলিশ। যাদব যাকে সহায়তা করেছেন, তিনি সম্পর্কে তার স্ত্রী ছিলেন।

ভারতের ২১ বছর বয়সী মুলায়াম সিং যাদব এবং পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সী ইকরা জিওয়ানির প্রথম পরিচয় হয় তিন বছর আগে। বোর্ড গেম লুডো খেলার সূত্রে অনলাইনে বন্ধুত্ব হয় দুজনের।

সেখান থেকেই এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। দু’জনই অবশ্য জানতেন যে তাদের একসঙ্গে থাকা অনেক কঠিন হবে।

ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ ভঙ্গুর – ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্র হয়। দুই প্রতিবেশী দেশ ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী এই দু’দেশের মানুষ একে অপরের দেশে ভ্রমণ করতে গেলে তাদের ভিসা পাওয়া জটিল হয়ে পড়ে।

তাই গত সেপ্টেম্বরে মুলায়াম ও ইকরা নেপালে ভ্রমণে যান, সেখানে তারা বিয়ে করেন। তারপর নেপাল থেকে তারা ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন।

কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তাদের সুখী দাম্পত্য জীবন হঠাৎ বিষিয়ে ওঠে - ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং জালিয়াতির অভিযোগ গ্রেফতার করা হয় যাদবকে। পাশাপাশি যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই একজন বিদেশি নাগরিককে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইকরা জিওয়ানিকে গত সপ্তাহে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে; অন্যদিকে মুলায়ম সিং যাদব বর্তমানে আছেন বেঙ্গালুরুর কারাগারে। যাদবের বাড়ি ভারতের উত্তরপ্রদেশে। তার পরিবারের সদস্যরাও বসবাস করেন সেই রাজ্যেই। পুরো ঘটনা ও যাদবের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জানার পর তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবি, এই দম্পতির গল্পটি ছিল কেবল একটি প্রেমের ঘটনা।

বিবিসিকে যাদবের ভাই জিৎলাল বলেন, ‘আমরা তাদের ফিরে পেতে চাই। আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি বুঝতে পারি; কিন্তু তারা শুধু প্রেমে পড়েছে। কোনো অপরাধ করেনি। ’ তাদের এই কথায় সায় আছে পুলিশেরও। বেঙ্গালুরু পুলিশের এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেনঅবৈধ প্রবেশ এবং জালিয়াতি ছাড়াও, এটি একটি প্রেমের গল্প বলে মনে হচ্ছে। ’

যাদব-জিওয়ানির প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে, করোনা লকডাউনের সময়। যাদব সে সময় বেঙ্গালুরুতে একটি আইটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কাজ করতেন; আর জিওয়ানি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দ্রাবাদ শহরের ছাত্রী ছিলেন। অনলাইনে পরিচয় হওয়ার পর দু'জনেই এতো দীর্ঘ দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এদিকে, ইকরা জিওয়ানিকে বিয়ে জন্য তার পরিবারের চাপ দিতে থাকলে তিনি যাদবের পরামর্শে পাকিস্তান ছেড়ে আসেন এবং যাদবের সঙ্গে দেখা করতে দুবাই হয়ে নেপালে যান। পুলিশ বলছে, সেখানকার একটি মন্দিরে হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন তারা, তারপর ভারতে ফিরে আসেন।

‘কিন্তু জিওয়ানির কাছে ভারতে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না, তাই  যাদব তার জন্য একটি জাল আধার কার্ডের (ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র) ব্যবস্থা করেছিলেন,’ বিবিসিকে বলেন বেঙ্গালুরু পুলিশের এক কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যাদব প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে যেতেন। সে সময় বাড়িতে থাকতেন জিওয়ানি। কিন্তু তিনি প্রায়ই পাকিস্তানে তার মায়ের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতেন; আর সেই সূত্র ধরেই তার নাগাল পায় পুলিশ।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন যে, তারা গত মাসে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন; কারণ ফেব্রুয়ারিতে বেঙ্গালুরুতে দুটি বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট হওয়ার কথা ছিল: অ্যারো ইন্ডিয়া এয়ার শো এবং একটি জি-টুয়েন্টি অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক।

আরও তদন্তের পর, ইকরা জিওয়ানিকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য আটক করা হয় এবং ২০শে জানুয়ারি ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে হস্তান্তর করা হয়। পরে ফেব্রুয়ারিতে তাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বেঙ্গালুরুর হোয়াইটফিল্ড জেলার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এস গিরিশ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত, তার বিরুদ্ধে শুধু অবৈধভাবে দেশে আসা ছাড়া আর কোনও অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে তদন্ত চলছে। ’

এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে ইকরা জিওয়ানি এবং পাকিস্তানে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বিবিসি, কিন্তু জিওয়ানি বা তার পরিবারের কারোর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এই সপ্তাহের শুরুতে, ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআই নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে—ইকরার বাবা নিশ্চিত করেছেন যে মেয়ে তাদের বাড়িতে পৌঁছেছে এবং তারা ‘এ বিষয়ে কথা বলতে চান না’।

যাদবের মা শান্তি দেবী বলেছেন যে তিনি আশা করেন দুই দেশের সরকার তাদের পুনরায় এক করতে সাহায্য করবে। ‘সে মুসলিম না পাকিস্তানি তা আমরা চিন্তা করি না, সে আমাদের পুত্রবধূ। আমরা তার ভালো যত্ন নেব,’ বিবিসিকে বলেন শান্তি দেবী।

 news24bd.tv/আলী