বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পৃষ্ঠপোষকতায় শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধন

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পৃষ্ঠপোষকতায় শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধন

শুভসংঘ স্কুলে শিক্ষার্থীদের কোনো বেতন দিতে হবে না। বরং তাদের বিনা মূল্যে বই, ব্যাগ, স্কুল ড্রেসসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হবে। এখান থেকে পড়ে হাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর দেওয়া হবে মাসিক বৃত্তি। শিক্ষকদেরও বেতনসহ স্কুলের সব খরচ বহন করা হবে।

বুধবার দুপুরে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামে স্কুলটির উদ্বোধন করে কথাগুলো বলেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক পত্রিকা কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

সারাদেশে শুভসংঘের পাঁচটি স্কুল চালু হয়েছে। তবে প্রথম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো বগুড়ায়। স্কুলটিতে পাঠদান করবেন হাপুনিয়া গ্রামে ২৬ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাওয়া রত্না দেবনাথ।

তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে গ্রামের শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দানের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। এরপর আবার নতুন শিক্ষার্থী জোগাড় করে তাদের পাঠদানের উদ্যোগ নেন। নিজের আপনজন বলতে কেউ না থাকায় ওই এলাকার শিশুদেরই আপন করে নেন তিনি।

একসময় রত্নার এই পাঠদান কার্যক্রমে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) সহযোগিতা করলেও ২০১৯ সালে সেই সহযোগিতাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বন্ধ হয়নি রত্নার পাঠদান কার্যক্রম। এ নিয়ে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট কালের কণ্ঠ’র শেষ পাতায় ‘রত্নার পাঠে আলোর পথে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

নিজের স্বামী-সন্তান এমনকি কোনো সম্পদ না থাকার পরও শিশুদের শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিত নারীর সংগ্রামের বিষয়টি কালের কণ্ঠ শুভসংঘের নজরে আসে। সে সময়ই রত্নার ওই পাঠশালার দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নেয় শুভসংঘ। বগুড়া শুভসংঘের সদস্যরা একাধিকবার রত্নার পাঠশালা পরিদর্শন করেন। এরই মধ্যে কালের কণ্ঠ’র ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বগুড়া অফিসের পক্ষ থেকে রত্না দেবনাথকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি রত্না দেবনাথের সংগ্রামী জীবনের কথা জেনে তাঁর জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ জন্য প্রয়োজন পড়ে এক খণ্ড জমির। শুভসংঘ তার ব্যবস্থা করবে বলে ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

কালের কণ্ঠ শুভসংঘ কেন্দ্রীয় পর্ষদ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর রত্না দেবনাথের বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি সেখানেই একটি স্কুল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই শুভসংঘ স্কুলেরই উদ্বোধন করেছেন কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। তিনি বলেন, 'শুভসংঘ হচ্ছে কালের কণ্ঠ’র একটি সংগঠন। এর পৃষ্ঠপোষকতা করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন একটি করে স্কুল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে পাঠাগার করা হবে। আমরা শিশুদের হাতে বই তুলে দিতে চাই এবং শিশুদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই। যে এলাকার শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যারা স্কুলে যেতে পারছে না, সে রকম জায়গায় শিশুদের একত্র করে আমরা স্কুল করতে চাই। '

কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘শুভসংঘ স্কুলের শিক্ষার্থীরা যত দূর পড়তে চায়, তত দূর পর্যন্ত তাদের বৃত্তি দেওয়া হবে। অভাবে পড়ে কোনো শিশু যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমার মাধ্যমে তা কার্যকর করছেন। ’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, ইউপি সদস্য সেকেন্দার আলী, নিশিন্দারা ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক জাকারিয়া পারভেজ, শিকারপুর-কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, শিকারপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জোবাইদা খাতুন প্রমুখ।

হাপুনিয়া গ্রামে শুভসংঘ স্কুলের উদ্বোধনের পর ইমদাদুল হক মিলন স্কুলের জন্য নির্ধারিত জায়গা পরিদর্শন করেন।