তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই খাল খনন

সংগৃহীত ছবি

তিস্তায় পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই খাল খনন

ভাষ্কর সর্দার 

ফের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে আরও দুটি খাল খননের কাজ শুরু করতে চলেছে। এর জন্য প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কৃষি কার্যের সুবিধার্থে পানির ব্যবহার এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনে শুক্রবার (২ মার্চ) মমতার সরকারের তরফে এই  নির্দেশনা দেয়া হয়।  

রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলায় আরও বেশি জমিতে সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করবে এই প্রকল্প।

কিন্তু উত্তরবঙ্গ থেকে প্রবাহিত তিস্তায় মমতার সরকারের এ খনন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ অনেকটাই রুষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনিতে  প্রতিবেশী দেশটির উত্তরাঞ্চলে পানি সংকট সমস্যা সমাধানের জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।  

ফলে, মমতার সরকারের দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় পর খাল খননের সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়বে ঢাকা। ২০১১ সালের মমতা ক্ষমতায় আসার পর তার আপত্তির কারণে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা তিস্তার পানি চুক্তির সমস্যা মেটেনি।

 

নাম প্রকাশে অপরাগ শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের একজন ফ্যাকাল্টি বলেন, তিস্তা থেকে আরও বেশি পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হলে উষ্ণ মৌসুমে আরও কম পরিমানের পানি যাবে বাংলাদেশে। মুলত, গ্রীষ্মের মাসগুলিতে তিস্তায় প্রায় একশ কিউমেক (সেকেন্ডে প্রতি কিউবিক মিটার) পানি পাওয়া যায়। যেখানে ভারত এবং বাংলাদেশে কৃষি জমিতে সেচের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৬০০ কিউমেক পানি।  

শুক্রবার(২ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন রাজ্যটির সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রায় এক হাজার একর জমি সেচদপ্তরকে হস্তান্তর করেছে। এই জমি তিস্তার বাম পাশের তীরে দুটি খাল তৈরি করবে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন। অপরদিকে তিস্তা ছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর জলঢাকা পানিকে সেচের কারণে ব্যবহার করা হবে।  

সেচ দফতর তরফে জানা গিয়েছে, প্রকল্প অনুসারে, তিস্তা এবং জলঢাকা থেকে পানি তোলার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা হবে। অপর একটি খাল হবে, যার দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার। যেটি তিস্তার বাম তীরে নির্মিত হবে।  প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, খালদুটি খনন হলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় একলাখ কৃষক এই সেচের সুবিধা পাবে। ব্যারেজটি জলপাইগুড়ি জেলার গাজলডোবায় অবস্থিত।  

উত্তরবঙ্গের ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেওয়ার সুবিধা দেওয়ার জন্য ১৯৭৫ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। এর প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, তিস্তা  নদীর পানি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রবাহমান অন্য নদী পানিও যাতে খালের মধ্য দিয়ে দুইপারে চাষ অঞ্চলে সেচের মাধ্যমে পাঠানো। যদিও প্রকল্পটি কয়েক দশক ধরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মাত্র পানি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র ১ দশমিক ৪ লাখ হেক্টরে পানি।  

এ বিষয় শনিবার(৪ মার্চ) সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানান, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন খাল খননের জন্য আমাদের এক হাজার একর জায়গা হস্তান্তর করেছে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করেছিল, কিন্তু এর জন্য তহবিল প্রদান করছে না। তবে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারে তহবিল না পেলেও, পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।  

পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগ জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের আরও একটি খাল সংস্কার করবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই খালটি চালু হলে ধূপগুড়ি ব্লকের ৩২ হাজার একর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে।

news24bd.tv/আলী