আবারও উত্তপ্ত পঞ্চগড়: রাতে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে হামলা-সংঘর্ষ-আগুন

সংগৃহীত ছবি

আবারও উত্তপ্ত পঞ্চগড়: রাতে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে হামলা-সংঘর্ষ-আগুন

অনলাইন ডেস্ক

পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের সালানা জলসার বিরোধিতাকারীদের আবারও হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’—গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে এমন গুজব ছড়ানো হয়। এরপর অনেকেই রাস্তায় নেমে আসেন লাঠিসোঁটা নিয়ে। গুজবকে ঘিরে শহরের একটি জুতার দোকান লুটপাটের ঘটনাও ঘটে রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে।

রাত ১০টার দিকে শহরের প্রেসক্লাব থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া রাত ১০টার দিকে ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। রাত ১২টার পর মুঠোফোনের ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছিল না।  

পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের কর্মী ও সমর্থকরা।

সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে আরিফ ও জাহিদ নামের দুজন নিহত হন। গতকাল সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুজনকে কাদিয়ানিরা জবাই করে হত্যা করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নামে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের মোতায়ন করা হয়েছে।  

সংঘর্ষের ঘটনায় নেপথ্য শক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। ইসলামী সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ করলেও কিছু তরুণকে মুখ ঢেকে হামলা করতে দেখা গেছে। তাই পুলিশের ধারণা, অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে ওই তরুণরা হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে।

গতকাল শনিবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও শহরজুড়ে ছিল থমথমে অবস্থা। বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এরই মধ্যে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুজবের বিষয়ে কান না দিতে মাইকিংও করা হয়।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে কিছু তরুণ মুখ ঢেকে হামলায় অংশ নেয়। তাদের হাতে লাঠিসোঁটাসহ ধারালো অস্ত্রও দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই তরুণরা বহিরাগত। পরিকল্পিতভাবে তারা হামলা করেছে।

পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে তাদের খোঁজ করছি। শিগগিরই জড়িত ও ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। মামলার প্রক্রিয়া চলছে। মামলার পরই গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে। ’

পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, এ ঘটনায় মুসল্লিদের আড়ালে জামায়াত-শিবির হামলা করেছে। দেশের পরিস্থিতি খারাপ করতেই এই হামলা করা হয়েছে।  

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের শতাধিক ঘরবাড়িতে আগুন

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়িতে পোড়া কালো দাগ স্পষ্ট। কিছু পোড়া জিনিসপত্র থেকে ধোঁয়া উঠছে। কেউ পোড়া বাড়িতে অবশিষ্ট কিছু আছে কি না তা দেখছে। আব্দুল কাদের মহিউদ্দিন খান নামের একজন বলেন, ‘আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া কিচ্ছু রক্ষা হয়নি। সব পুড়ে গেছে। আমার ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ’

জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশের চৌধুরী দাবি করেন, ৪০ থেকে ৫০ জন তরুণ হামলা চালায়। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল।

আগুনে পুড়েছে বিদ্যালয়টিও : আহম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়েও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের আধাপাকা ভবনটি পুড়ে গেছে। ওই ভবনের শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ, শিক্ষকদের কক্ষ ও বিজ্ঞানাগার ছিল। বিজ্ঞানাগারের ১৩টি ল্যাপটপ, একটি কম্পিউটার, প্রজেক্টর, প্রিন্টারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

news24bd.tv/আইএএম