দেশে অগ্নিকাণ্ড এত বাড়ছে কেন?

সংগৃহীত ছবি

দেশে অগ্নিকাণ্ড এত বাড়ছে কেন?

অনলাইন ডেস্ক

গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং চট্টগ্রামে বড় ধরনের বিস্ফোরণসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। দুটি দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অন্তত ৪০ জন।  অগ্নিকাণ্ডের মতো এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।

মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারের নীতিনির্ধারক মহল, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন। বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তারা বলছেন, আমাদের অনেক ভবন ও অবকাঠামো আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গ্যাসচালিত যানবাহনের অধিকাংশ একেবারে ঝুঁকিমুক্ত, তাও বলা যাবে না।
মূলত যত দুর্ঘটনা ঘটছে, এর জন্য মানুষের দায় ও দায়িত্বহীনতা বেশি। এছাড়া দুর্ঘটনা-পরবর্তী দ্রুত উদ্ধারকাজে আমাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি যেসব সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো দ্রুত দূর করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য বড় ঝুঁকি। অপরিকল্পিতভাবে এমন কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠেছে, যেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত পৌঁছানোর সুযোগ কম। এ জন্য সবাইকে সচেতন হয়ে সব বিষয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, অক্সিজেন, রাসায়নিক, বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্র্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় আমাদের বিপদ বাড়ছে। যারা বিভিন্ন রাসায়নিক আমদানি করেন, তারা ভোক্তা পর্যায়ে পাঠানোর আগে সতর্কতা অবলম্বন করেন না। আবার দাহ্য পদার্থ ব্যবহারেও সঠিক জ্ঞান নেই অনেকের। নেই কোনো ট্রেনিংও। এসব কেমিক্যাল ব্যবহারের মৌলিক ধারণাও অনেকের মধ্যে নেই। যে কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা বেশি ঘটে।

অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি বলেন, বাতাসে যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, আগুন ধরার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। এর সঙ্গে যদি আরও ফ্রেস অক্সিজেন যোগ হয়, তাহলে তো এর মাত্রা বাড়বেই। ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের সময় সচেতনতা না থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা দিনদিন বাড়তেই থাকবে।

বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি বলেন, নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার এবং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহারে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিদ্যুৎ পরিবাহী হলো কপার। কপারের মাধ্যমে দ্রুত বিদ্যুৎ পরিবাহন হতে পারে। কিন্তু এখন বৈদ্যুতিক তার তৈরি করা হচ্ছে নিম্নমানের দস্তা দিয়ে। এই তারের ভেতর দিয়ে যখন বিদ্যুৎ পরিবাহন হয়, তখন বিদ্যুৎ নরমাল গতিতে যেতে পারে না। অনেকটা ধাক্কা দিয়ে নিতে হয়, ফোর্স করার কারণে এ থেকে বিস্ফোরণ হয়। তিনি বলেন, বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা হ্রাসে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এখানে বিভিন্ন বিস্ফোরণ ও আগুনে পোড়া রোগী বেশি আসে। আমরা অনেককেই বাঁচাতে পারি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিম্নমানের সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব সিলিন্ডারের মান যাচাই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাসাবাড়ি এবং অফিস-আদালতের যেসব ডেকোরেশন করা হয়, এর অধিকাংশই বেশি দাহ্য জিনিসপত্র। তিনি বলেন, ভূমিকম্প কিংবা অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো দুর্যোগে এগুলোই বিপদের বড় কারণ হয়। ফলে এ বিষয়ে সবাই আগে থেকে সচেতন থাকতে হবে।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক