কথায় কথায় ‘চড়-থাপ্পড় মারেন ইউএনও’

সংগৃহীত ছবি

কথায় কথায় ‘চড়-থাপ্পড় মারেন ইউএনও’

অনলাইন ডেস্ক

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দিয়ে আলোচনায় আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেন। এখন এই ইউএনও’র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানান, হয়রানি করাসহ চড়থাপ্পড় দেওয়া তাঁর কাছে নতুন কোনো ঘটনা নয়। ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে টেন্ডার ছাড়াই গাছ কাটা, চাঁদাবাজি, দোকান থেকে বাকি নিয়ে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

ফকিরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ফকিরহাটে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউএনও বিভিন্ন সময় একাধিক ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। কারণে-অকারণে তিনি বিভিন্নজনকে জরিমানা করাসহ হয়রানি করেন। সড়কের পাশ থেকে টেন্ডার ছাড়াই গাছ কেটে নিয়েছেন। ফকিরহাট বাজারে তিনি নীরব চাঁদাবাজি করেন।

আমাদের ডিসি (জেলা প্রশাসক) স্যারের ছেলে, নাম সম্ভবত নিহাল, তাকে নিয়ে এখানে মিনি সুন্দরবনসংলগ্ন গোদাড়া গেটে “নিহাল উৎসব” পালন করেছেন। এ জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। চাল, মাংসসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য উনি সকালে লিস্ট পাঠান। সেই লিস্ট ধরে তাঁকে বাজার পাঠাতে হয়। ’

ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড় এলাকার একটি পরিবহনের কাউন্টার ব্যবসায়ী জুয়েল রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমাদের ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাস খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে যাত্রী তুলতে কাউন্টারের সামনের রাস্তায় দাঁড়ায়। এখানে পাঁচটি টিকিট কাটা ছিল, রাস্তার পাশে গাড়িটি দাঁড়ানোয় ইউএনও এসে জানতে চান কাউন্টার কার? তখন আমি বলি, স্যার, আমার কাউন্টার—এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে দুটি চড় মারেন। পরে হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যান। ’

একই স্থানে থাকা অপর একটি কাউন্টারের সহকারী আজিজুল বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে কাউন্টারের সামনে ইমাদ গাড়ি দাঁড়ানোর অপরাধে ইউএনও স্যার আমাকে চড়থাপ্পড় দিয়ে তার গাড়িতে ওঠান। ভয়ভীতি দেখান। পরে অনেক দূর নিয়ে ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দেন। ’

উপজেলার নওয়াপাড়া মোড় এলাকার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত ২ জানুয়ারি বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কে রাখা কিছু ইট ভ্যানে করে বাড়ির মধ্যে নিচ্ছিলেন কেয়ারটেকার খায়রুল ইসলাম (৫০)। এর মধ্যেই ইউএনও ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সড়কে ইট রাখার কারণ জানতে চান। ভুল স্বীকার করলেও ইউএনও কেয়ারটেকারকে চড়থাপ্পড় দেন।

এদিকে পাগলা শ্যামনগর এলাকা থেকে পাঁচ থেকে ছয়টি শতবর্ষী গাছ এবং উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসের সামনে কয়েক লাখ টাকার গাছ নিয়মবহির্ভূতভাবে কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। ফকিরহাট উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শাহজামান চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘হঠাৎ করে কিছু শ্রমিক এসে আমাদের অফিসের সামনে থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসা করলে বলে ইউএনও কাটতে বলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি। যেহেতু তিনি উপজেলার শীর্ষ কর্মকর্তা, এ জন্য আমরা কিছু বলিনি। ’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে আইন অমান্য অথবা অনিয়মের কারণে বিভিন্নজনকে আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এসব কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। ’

গত বুধবার দুপুরের দিকে ফকিরহাটের কাঁঠালতলা এলাকায় খুলনা-মাওয়া মহাসড়কে ইউএনওর গাড়িতে ঘষা লাগার অভিযোগে মোটরসাইকেল আরোহী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেছে ধরা পড়ে ওই চিত্র।  

news24bd.tv/আইএএম