বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি শূন্য

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি শূন্য

মোহাম্মদ আরাফাত

করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রতিটি দেশের অর্থনীতির জন্য বিশাল একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এই চ্যালেঞ্জ উল্লেখযোগ্যভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সমালোচকরা বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের আর্থিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিয়ে আসছে। তবে সেই সংকটের ঝুঁকি প্রায় শূন্য।

বাংলাদেশের অর্থনীতির গত দুই দশকের অগ্রগতি এটাই প্রমাণ করে যে, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালোই থাকবে। প্রকৃতপক্ষে, এর বিকাশ আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এক সময় বাংলাদেশকে 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে আখ্যায়িত করলেও প্রায়শই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এর একটি কারণ হলো, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নজর দিয়েছে সরকার।

দেড় লাখেরও বেশি গৃহহীন পরিবারকে সরকারি অর্থায়নে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে সরকার। পদ্মা সেতুসহ বড় প্রকল্পে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা দেশটির বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সরকার মেট্রো ব্যবস্থাকেও সম্প্রসারণ করছে এবং বঙ্গবন্ধু টানেলের মত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। ডিজিটাল অবকাঠামো এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।

এসব উন্নতি দেশটির অর্থনীতিতে অগ্রগতি এনেছে। ১৯৯০ সালের তুলনায় দেশটির জিডিপি বেড়ে ৮ গুণ হয়েছে। ২০২২ অর্থবছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। জাতিসংঘের সূচকে মধ্যম আয়ের দেশের পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়েছে। শুধু এশিয়ার মধ্যেই নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায়ও একটি শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে দেশটির। সম্প্রতি মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ এবং গত দশকের বেশিরভা সময়েই পাকিস্তানের অর্থনীতি থেকে এগিয়ে ছিল।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অর্থনীতিবিদ জেফরি সাচস ২০২১ সালে ঘোষণা দেন, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি লক্ষাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নারীদের ভর্তির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২০১৭ সালে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ১৯৯৬ সালে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়েছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের স্কলার ড্যানিয়েল রুন্ডে উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রমাণ করে যে নারীর ক্ষমতায়ন কাজ করে। ’

শিক্ষা দেশের অর্থনৈতিক শক্তির মূল চালিকাশক্তি। বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকারী সরকারী নীতিমালা ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ৯৫ শতাংশ সাক্ষরতার হারের দিকে ধাবিত করছে। এটি প্রস্তুত কর্মীবাহিনী তৈরি করছে।  

বাংলাদেশের শিক্ষিত কর্মীবাহিনী এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির অর্থ এই যে, এর আর্থিক খাত শক্তিশালী হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ এর বিপর্যয় মোকাবিলায় ঋণ নিয়েছিল, সেটাও একটি শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির লক্ষণ। বাংলাদেশকে ইতিবাচক গতিপথে রাখতে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টায় ঋণগুলো নেওয়া হয়।

প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি স্থিতিশীলতা যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানের জন্য আস্থা যোগায়। বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত আগেও বিশ্বের সর্বনিম্নের একটি ছিল এবং এখনো আছে।

মুডি’স বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটে নেই, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকিও কম। ব্লুমবার্গ সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভোক্তা আশাবাদ, উদ্ভাবন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবৃদ্ধি-সমর্থক নীতির জন্য বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

অবশ্যই, বাংলাদেশ নিখুঁত নয় এবং সরকারের এখনো অনেক কাজ করতে হবে। ঢাকাকে অবশ্যই দারিদ্র্যের হার কমানোর চেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। সরকারকে জ্বালানী খরচ কমাতেও কাজ করতে হবে। এবং যখন জাতি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তার কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছে, তখন আরও কিছু করা উচিত: বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ যে কোনো মানদণ্ডে  একটি  সত্যিকারের সাফল্যের গল্প।

লেখক: চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন
news24bd.tv/AA-SA