স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নবীজি (সা.)-এর ৬ নির্দেশনা

প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নবীজি (সা.)-এর ৬ নির্দেশনা

মুফতি আব্দুল্লাহ আল ফুআদ

একজন প্রকৃত মুমিন কখনো স্বাস্থ্যের প্রতি  উদাসীন থাকতে পারে না। কেননা শক্তিবান ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি প্রিয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।

আর যা তোমাকে উপকৃত করবে, সেটিই কামনা করো। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪)

হাদিসের আলোকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কয়েকটি দিক এ লেখায় আলোচনা করা হলো;

দাঁতের যত্ন : সুস্থতার জন্য দাঁত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, দাঁতের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করতে সচেষ্ট থাকা জরুরি। রাসুল (সা.) নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতেন।

দাঁত যত্নের প্রক্রিয়ায় গাছের শিকড় জাতীয় মিসওয়াক ছিল রাসুল (সা.)-এর একমাত্র মাধ্যম। তিনি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত এই মিসওয়াকের আমল করতেন। রাসুল (সা.) রাত-দিনের যখনই ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন অজুর আগে মিসওয়াক করে নিতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৭)

শরীরচর্চা কিংবা দ্রুত হাঁটা : সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। যারা কর্মব্যস্ততায় শরীরচর্চার সুযোগ পান না, চিকিৎসকরা তাদের প্রতিদিন নিয়ম করে দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীরচর্চার অংশ হিসেবে নবীজি (সা.) সাহাবাদের সঙ্গে কুস্তি লড়েছেন। মাঝেমধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। প্রিয়তম স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গেও এক রাতে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সব সময় স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে দ্রুত গতিতে হাঁটতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-এর চেয়ে দ্রুতগতিতে কাউকে হাঁটতে দেখিনি। ’ (তিরমিজি : ৩৬৪৮)

পরিমিত খাবার ও পানি পান : সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের বিকল্প নেই। বর্তমান বিশ্বের ডায়েটিশিয়ানরা রোগীদের পরিমিত আহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নবীজি (সা.) পরিমিত খাবারে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পেটের তিন ভাগের এক ভাগ খাবারের জন্য। এক ভাগ পানির জন্য। এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা। ’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০)

সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিচ্ছন্নতা : ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অনুসঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৩)

তা ছাড়া অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা পরিবেশ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এর কারণে নানা রোগজীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটে শরীরে। তাই অজু ও গোসলের পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি শরীরের অবাঞ্ছিত কয়েকটি বিষয়ের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৯)

দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ : সুস্থতা ও অসুস্থতা দুটোই মুমিনের জন্য নিয়ামত। তবে নেকির আশায় ইচ্ছাকৃত অসুস্থতা হওয়া যাবে না। নবী করিম (সা.) তার সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থতার সময় চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৭৮)

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম : ঘুম দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে। মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রাতের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর ঘুম। চিকিৎসকরা দেরিতে ঘুমের অভ্যাসকে শরীরের জন্য নানাবিধ জটিল রোগের উৎস বলে থাকেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)

একজন মুমিনকে যেমনিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবাদতের প্রতি তৎপর থাকতে হবে, তেমনিভাবে যথাযথ ও তৃপ্তিকর ইবাদতের জন্য সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারেও যত্নশীল হতে হবে।