কেন চোরাই পথে আসা স্বর্ণের ওপর নির্ভরশীল দেশের জুয়েলারি খাত?

সংগৃহীত ছবি

কেন চোরাই পথে আসা স্বর্ণের ওপর নির্ভরশীল দেশের জুয়েলারি খাত?

অনলাইন ডেস্ক

স্বর্ণ ব্যবসা বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো হলেও সরকারের যথাযথ নীতি ও সহায়তার অভাবে খাতটি সেভাবে বিকাশ লাভ করতে পারেনি। ফলে দেশের স্বর্ণের চাহিদার সিংহভাগই আসে অবৈধ পথে।  

ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও গবেষকদের মতে, বর্তমানে দেশের স্বর্ণের চাহিদার মোট ৯০ শতাংশই অবৈধ পথে দেশের বাজারে ঢুকছে। তাদের মতে, উচ্চ মাত্রার কর এবং জটিল নিয়ম-নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা অবৈধ উৎসের ওপর নির্ভর করে।

 

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এর তথ্য বলছে,  প্রতিবছর ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণের বার ঢুকছে অবৈধ পথে। ২০২০ সালে দেশের মোট ৩৯৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ১৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ আসে সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আসে ১২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের কাছাকাছি অবস্থান হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের একটি সহজ ও নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। সাতক্ষীরা, বেনাপোল, কুষ্টিয়া, যশোর, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ দেশে ঢুকছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে  ১০০টির বেশি স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। চক্রগুলো মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণ এনে বাংলাদেশ ও ভারতে সরবরাহ করে।

গোল্ড পলিসির তথ্য বলছে, বাংলাদেশের বাজারে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৪০ টন স্বর্ণের চাহিদা রয়েছে। এর মাত্র ১০ শতাংশ পুরনো স্বর্ণ দিয়ে পূরণ হয়।  

পলিসি এক্সচেঞ্জ বংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘দেশের মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ স্বর্ণ আসে অবৈধ পথে। একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ স্বর্ণের বাজার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নীতির দিকে নজর দিতে হবে। বেশি কর আরোপ ব্যবসায়ীদের অবৈধ পথে আসা স্বর্ণের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য করবে। ’

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পে ভারত থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। সরকার যদি আমাদের যথাযথ নীতিগত সহায়তা দেয় এবং বিদ্যমান করের হার সংশোধন করে; তবে স্বর্ণখাতেও আমরা ভারতকে পেছনে ফেলতে পারি। ’ 

তিনি আরও বলেন, ‘স্বর্ণ খাতের নিরাপত্তা ও বিকাশের জন্য একটি বিশেষ জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। স্বর্ণ আমদানিতে শুল্ক ও করমুক্ত সুবিধা দিলে চোরাচালান বন্ধ হবে। ’ আর এ জন্য আইনের সংশোধন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বাজুস প্রেসিডেন্ট।

দেশে অবৈধ পথে স্বর্ণ প্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে নজরদারি বাড়াতে অনুরোধ করেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা।

যথাযথ নীতিমালার অভাবে স্বাধীনতার পর থেকেই অবৈধ পথে দেশে স্বর্ণ আসছে। অবৈধ পথে স্বর্ণ আসা বন্ধ না হলে স্বর্ণ খাত বিকাশ লাভ করতে পারবে না।

বর্তমানে দেশের জুয়েলারি খাতে ৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫০ লাখের বেশি মানুষ যুক্ত। দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাতের থেকে বেশি অবদান রাখতে পারে স্বর্ণ খাত। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে স্বর্ণ খাতের।  

news24bd/ARH