‘ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায়’ স্ট্যাটাসের পর হাসপাতালে ভর্তি ছাত্রলীগ নেতা

ফিরোজ হোসেন

‘ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায়’ স্ট্যাটাসের পর হাসপাতালে ভর্তি ছাত্রলীগ নেতা

অনলাইন ডেস্ক

যশোরের চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ হোসেনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এর আগে ফেসবুকে ‘ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায়’সহ দুটি স্ট্যাটাস লিখে পোস্ট করেন তিনি। এটি আত্মহত্যার চেষ্টা না অসুস্থতা তা নিয়ে সরগরম স্থানীয় রাজনীতির মাঠ, চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার দুপুরে সদ্য ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ হোসেন তার ফেসবুক ওয়ালে একটি আবেগঘন ‘স্ট্যাটাস’ দেন।  

তিনি লেখেন, ‘ভালো থাকুক প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজ থেকে বিদায় নিচ্ছি ছাত্র রাজনীতি থেকে। আমি চৌগাছার সকল নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

অতীতে আমার কোনো ভুল হলে আমাকে মাফ করে দিয়েন। এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ পোস্ট। ভালো থাকুক সকলেই। ’

এই স্ট্যাটাসের পরপরই তিনি মাত্র একশব্দে আরও একটি ‘স্ট্যাটাস’ দেন। সেটি হলো ‘বিদায়’।  

দুটি স্ট্যাটাসের তলায় অনেক মন্তব্য জমা পড়ে।

ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে দুটি স্ট্যাটাস পাওয়ার পরপরই ফিরোজ হোসেনের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন করা হয়। তিনি একবারও রিসিভ করেননি। এরই সঙ্গে সহকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ শুরু করেন। তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে তারা জানতে পারেন- চৌগাছা সরকারি কলেজের একটি কক্ষে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন ফিরোজ হোসেন। এই খবর পেয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত আহ্বায়ক কমিটির নেতারা দ্রুত ছুটে যান এবং তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সদ্য ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান রেজা, আব্দুল করিম, রুবেল হুসাইন, শফিউর রহমান রাথিক জানান, শনিবার জেলা ছাত্রলীগের নেতারা চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। যারা নেতৃত্বে এসেছেন তারা বিগত দিনে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। এতে আমরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওইদিনই চৌগাছা উপজেলা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করি।  

তিনি আরও বলেন, কমিটিতে অর্থ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। ঘোষিত এই কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। কমিটি নিয়ে আমরা বেশ চিন্তিত আছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা চৌগাছার এই কমিটি প্রদানের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ-বাণিজ্য করেছেন। অসুস্থ ওই ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকেও পর্যাপ্ত অর্থ নিয়েও তাকে পদ দেওয়া হয়নি। যার কারণে ক্ষোভে-দুঃখে হতাশ হয়ে ওই স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার দিকেই যাচ্ছিলেন তিনি, তবে অর্থ লেনদেনের প্রমাণ আমাদের হাতে না থাকায় আমরা ওই নেতার নাম উল্লেখ করছি না। দলীয় হাইকমান্ড বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালালে সত্যতা পাবে।

তারা আরও বলেন, রোববার বেলা ১১টার দিকে এ নিয়ে আমাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। সংবাদ সম্মেলন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতিও চলছিল। এই অবস্থায় হঠাৎ ফোনে ফিরোজ হোসেনকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেখে আমরা খোঁজাখুঁজি করি।  

নবনির্বাচিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান রেজা বলেন, ফিরোজ হাসানকে পাওয়ার পর সে আমাদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছিলো, তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এ সময় তাকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে দলীয় নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ হাসপাতালে আসেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. লুৎফুন্নেসা জানান, ফিরোজ হোসেন সম্পূর্ণ সুস্থ এখন, আশঙ্কামুক্ত। তার কোনো সমস্যা নেই।

এমন পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ফিরোজ হোসেন বলেন, আমার অ্যাজমা ও হার্টের একটু সমস্যা আছে। সে কারণে কলেজের হোস্টেলে ছোট ভাই সুমনের ওখানে ছিলাম। ছাত্রলীগ নেতারা আতংকিত হয়ে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।  

ফেসবুকে হতাশাজনক স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আত্মহত্যা করবো বা মারা যাবো- এমন স্ট্যাটাস দিইনি। সংগঠন থেকে বিদায় জানিয়ে এটা লিখেছিলাম।

ফিরোজ হোসেনের গ্রামের বাড়ি উপজেলার ধূলিয়ানী ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামে।  

news24bd.tv/আইএএম