১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যে ঘটনা ঘটলো মাত্র দ্বিতীয়বার

সংগৃহীত ছবি

১৪৬ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে যে ঘটনা ঘটলো মাত্র দ্বিতীয়বার

অনলাইন ডেস্ক

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে শ্রীলঙ্কার সামনে বেশ কঠিন এক সমীকরণ দাঁড়ায়। নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করতে পারলে দলটি পেতো ওভালের টিকিট। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ভালো একটা সম্ভাবনাই তৈরি করেছিল লঙ্কানরা। তবে শেষ বলের নাটকীয়তায় উল্টো হেরে গেছে সফরকারী দল।

বিস্ময়কর সেই হারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের টিকিট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কার হারের চেয়ে ক্রাইস্টচার্চে আলোড়ন তৈরি করেছে নিউজিল্যান্ডের জেতার ধরন। স্বাগতিকরা ম্যাচ জিতেছে দিনের শেষ বলে। তাও ‘বাই’ রানের সুবাদে।

দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরির পর নিউজল্যান্ডকে ২ উইকেটের অবিস্মরণীয় এই জয় এনে দেন কেন উইলিয়ামসন।

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৬ বলের ইতিহাসে শেষ বলে ম্যাচ জয়ের ঘটনা আছে আগে আর একটিই। ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতেছিল ইংল্যান্ড। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজ টেস্ট জিততে নিউজিল্যান্ডের শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৮ রান, হাতে ছিল ২ উইকেট। কাকতালীয়ভাবে ডারবান টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ওভারে ইংলিশদেরও প্রয়োজন ছিল ৮ রান। তারাও ম্যাচটি জিতেছিল ২ উইকেটে।

দুই সপ্তাহ আগে ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১ রানের জয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের আরও একটি রুদ্ধশ্বাস জয়ের নায়ক উইলিয়ামসন। ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে অপরাজিত থেকে যান তিনি ১৯৪ বলে ১২১ রানের ইনিংস খেলে। তবে কিউইদের জয়ে তিনি একা নায়ক নন। ড্যারিল মিচেলের অবদান যে ভোলার নয়। উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার ১৫৭ বলে ১৪২ রানের জুটিই মূলত নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে নেয় জয়ের কাছে।

মিচেল যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন নিউজিল্যান্ডের রানরেট ৩ এরও নিচে। কিন্তু তার ৮৬ বলে ৮১ রানের ইনিংস দারুণভাবে মিটিয়ে দেয় পরিস্থিতির দাবি। প্রথম ইনিংসের মহামূল্য সেঞ্চুরির সঙ্গে শেষ দিনের এই ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান মিচেলই।

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পঞ্চম দিনের শুরুতে সম্ভব ছিল সব ফলাফলই। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ভেস্তে যায় ৩৭ ওভার। খেলা শুরুর পর দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান টম লাথাম ও কেন উইলিয়ামসন সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ে ফেরে প্রবাথ জয়াসুরিয়ার স্পিনে। কাট করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন টম লাথাম (২৪)। শুরুটা দারুণ করলেও হেনরি নিকোলস (২০) আউট হয়ে যান জয়াসুরিয়াকে সুইপ খেলে।

নিউজিল্যান্ডের রানরেট তখন ধুঁকছে। তবে মিচেল উইকেটে গিয়ে প্রাণের সঞ্চার করেন তাদের সম্ভাবনায়। প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে জয়াসুরিয়াকে ছক্কায় ওড়ান তিনি। এরপর ছুটতে থাকেন দারুণ খেলে। শ্রীলঙ্কা হাতছাড়া করে উইলিয়ামসনকে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ। ৩৩ রানে উইকেটের পেছনে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি নিরোশান ডিকভেলা।

উইলিয়ামসন ও মিচেলের জুটির সময় মনে হচ্ছিল, নিউজিল্যান্ড জিতে যাবে সহজেই। কিন্তু আসিথা ফার্নান্দো দুর্দান্ত বোলিংয়ে জাগিয়ে তোলেন শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা। স্টাম্পের বাইরের ইয়র্কার লেংথের বল স্টাম্পে টেনে আনেন মিচেল। দুর্দান্ত ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান টম ব্লান্ডেল। এই জোড়া শিকারের পর আসিথা ফিরিয়ে দেন মাইকেল ব্রেসওয়েলকেও। পরে টিম সাউদিকে দ্রুত বিদায় করেন লাহিরু কুমারা।

কিন্তু উইলিয়ামসনকে বিদায় করা যায়নি। সেঞ্চুরি ছুঁয়ে আরও এগিয়ে দলের জয় সঙ্গে নিয়েই ফেরেন তিনি। আগের টেস্টে ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট নিয়ে ১ রানের জয় নিশ্চিত করেছিলেন যিনি, সেই নিল ওয়াগনার এবার চোট নিয়েও ব্যাটিংয়ে গিয়ে স্বাক্ষী হন অবিস্মরণীয় জয়ের।

আগামী শুক্রবার থেকে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ওয়েলিংটনে।

news24bd.tv/SHS