প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, রণক্ষেত্র কুমিল্লার দেবিদ্বার

সংগৃহীত ছবি

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, রণক্ষেত্র কুমিল্লার দেবিদ্বার

অনলাইন ডেস্ক

কুমিল্লার দেবিদ্বারে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখায় এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়েছে পুলিশ। এতে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

এ সময় প্রধান শিক্ষক ও তার মেয়ের জামাইয়ের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।  

বুধবার (১৫ মার্চ) বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মো. মোকতল হোসেন মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।  

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার সকালে ৯টার দিকে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন।

দ্বিতীয় দফায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিষ্ঠানের একটি শ্রেণিকক্ষে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন সহপাঠীরা। এ ঘটনার পর ছাত্রীকে নিয়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন কয়েকজন সহপাঠী। বিষয়টি জানাজানি হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করে তাকে অবরুদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে বিচার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেরে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানান। এ সময় বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা এবং প্রধান ফটক ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পরে প্রধান শিক্ষক ও তার মেয়ের জামাইয়ের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।

দুপুরে প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তার পক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।  আহত শিক্ষার্থী ইব্রাহীম, মো. নাঈম ও জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছে, ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান প্রধান শিক্ষক। এতে অন্তত ৮-১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতরা সবাই ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র। ছাত্রদের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষককে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। সংবাদ পেয়ে বিকালে দেবিদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান।

এ সময় পুলিশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং সন্ধ্যার দিকে স্কুল ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি ছুড়লে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

গুলিবিদ্ধদের মধ্যে সিয়াম, মিনহাজ, অলি, আকাশ, আরিফুল ইসলাম, সাব্বির ও হৃদয়কে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা চলছে।  

রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুল সংখ্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এতে পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ ৫ পুলিশ আহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ৯টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ গিয়ে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।  

দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, ‘ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে স্থানীয় জনতা। রাতে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করেছি আমরা। তবে কতজন গুলিবিদ্ধ কিংবা আহত হয়েছেন, সে তথ্য নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। অনেকে আহত হয়েছেন, এর মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। ’

news24bd/ARH