ভারতের সাথে ডিজেল পাইপলাইন থেকে কতটা লাভ পাবে বাংলাদেশ?

ভারতের সাথে ডিজেল পাইপলাইন থেকে কতটা লাভ পাবে বাংলাদেশ?

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চিুয়ালি ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের উদ্বোধন করবেন আজ শনিবার । ‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আসবে।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিকেল ৫টা অনুষ্ঠানটির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভারত থেকে ডিজেল আমদানির জন্য তৈরি করা বাংলাদেশ–ভারত মৈত্রী পাইপলাইন দিয়ে আমদানি করা ডিজেল দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার চাহিদা পূরণ করার আশা করছে কর্তৃপক্ষ এবং এ জন্য খরচও আগের চেয়ে কমবে বলে দাবি করছে তারা।

তবে চুক্তির আওতায় এই পাইপলাইন তৈরি ও ডিজেল আমদানি করা হবে সেসব তাতে কি আছে তা বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।  
এর ফলে পাইপলাইন বাংলাদেশকে জ্বালানীর ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ভারত নির্ভর করে তোলে কি-না তা নিয়েও উদ্বেগ আছে।

এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি বলেছে, এতদিন যে পদ্ধতিতে ভারত থেকে ডিজেল আনা হচ্ছিলো সেটি আদর্শ ছিলো না বরং এখন নতুন পাইপলাইন হয়ে যাওয়ায় ‘তুলনামূলক কম খরচে’ এবং ‘রিয়েল টাইমে’ জ্বালানি পাওয়া যাবে।

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এজাজ হোসেন বলেন, এখানে শুধু তেল আনাটা সহজ হচ্ছে আর কোনো কিছুই বাংলাদেশ পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এই পাইপলাইনে আনা জ্বালানি তো কম বা সাশ্রয়ী দামে পাবে না। আবার এখানে কোনা গ্যারান্টেড সাপ্লাইয়ের বিষয়ও নেই। যে পরিমান তেল আসবে তা খুব বড় কিছু নয়।

বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে কম খরচে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম হবেন তারা।

যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর সাথে যে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের হয়েছে তাতে এই পাইপলাইন নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ না করলে বলা কঠিন যে এতে বাংলাদেশের লাভ হবেই।

তিনি বলেন, ভারতের দুটি প্রতিষ্ঠান এই সীমান্ত পাইপলাইন দিয়ে ডিজেল পাঠাবে। তারাও যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন তখন দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে তার থেকে সুরক্ষাকবচ কি ? তা নিয়ে সংসদ বা মন্ত্রিসভা কোথাও কথা হয়েছে?

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানির পঁচাত্তর শতাংশই ডিজেল এবং দেশে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৪৬ লাখ টন। এর আশি ভাগই সরকারকে আমদানি করতে হয়।

২০১৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে দুই হাজার দুশো টন ডিজেল আমদানি হয় বাংলাদেশে।

পাইপলাইন লাভ দিবে বাংলাদেশকে?

বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, এখন রেল ওয়াগনে করে তেল আনতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। তার দাব্‌ পাইপলাইনে এলে এ খরচ অনেক কমবে।

তিনি বলেন, রেল ওয়াগনে অপচয় যেমন হয় তেমনি প্রায়শই নানা দুর্ঘটনায় ক্ষতি হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি পাইপলাইনে আনাটাই ‘বেস্ট স্মার্ট’ উপায়।

অন্যদিকে গত দশই মার্চ দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় ডিজেল রিসিভ টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ব্যারেল জ্বালানি পরিবহনে খরচ হয় প্রায় ১১ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার। কিন্তু পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে জ্বালানি আমদানি শুরু হলে এই খরচ ছয় ডলার পর্যন্ত কমে যাবে।

কর্তৃপক্ষের দাবি বছরে দশ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত জ্বালানি ভবিষ্যতে এ পাইপলাইনে আনা সম্ভব হবে এবং তাতে করে সার্বিক জ্বালানি পরিবহন খরচ কমবে বলে মনে করেন তারা। কারণ এখন তেল চট্টগ্রামে এনে সেখান থেকে খুলনা হয়ে পার্বতীপুরে নিতে হয়। তবে পাইপলাইন আনার ফলে সত্যিকারভাবে কেমন অর্থ বাংলাদেশের সাশ্রয় হবে সেটি জানতে আসলে আমদানির পর নির্দিষ্ট সময় শেষেই বলা সম্ভব হবে ।

মূলত ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে ডিজেল আনার পরিমাণ বাড়াতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন নামের এই পাইপলাইনটি নির্মাণ করা হয়েছে। নুমালিগড় রিফাইনারি ও বিপিসির অধীনস্থ কোম্পানি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এনআরএল এবং পার্বতীপুর ডিপোর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার ভারতে এবং বাকি ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার বাংলাদেশে পড়েছে।

তবে নুমালিগড় থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন আগে থেকেই ছিলো। এ কারণে ভারত প্রান্তে নতুন করে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করতে হয়েছে।

পাইপলাইনে আনা জ্বালানি পার্বতীপুরের টার্মিনালেই রাখা হবে এবং পরে সেখান থেকে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হবে। সেজন্য এই টার্মিনালে উনত্রিশ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার ডিপো নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২০ সালে এই পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছিলো এবং এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ভারত সরকার দিয়েছে ৩৩৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাইপলাইনের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

news24bd.tv/রিমু  

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর