‘দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব’

সংগৃহীত ছবি

বিএসএমএমইউতে সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত

‘দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব’

অনলাইন ডেস্ক

‘দ্রুত চিহ্নিত করাই জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়। বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং নারীদের  যাতে ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বিবাহ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার চিকিৎসায় গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, অবস এন্ড গাইনি বিভাগ, ভাইরোলজি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, অনকোলজি বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টদের সম্বনিতভাবে কাজ করতে হবে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার যথা সময়ে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম আরো জোরদার করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জরায়ুমুখের ক্যান্সার চিহ্নিতকরণ ও চিকিৎসার সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে এর সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হলে এই সেবা কার্যক্রম দেশব্যাপী জোরদার করতে হবে। ’

আজ রবিবার (১৯ মার্চ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লক অডিটোরিয়ামে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সার্ভিক্যাল বা জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ বিষয়ক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান সহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টগণ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির সদস্য সচিব, নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ ও মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা।

সেমিনারে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবস এন্ড গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা শারমিন, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা খাতুন, কনসালটেন্ট ডা. মনোয়ারা বেগম।

সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা শারমিন তার ‘ইভালুয়েশন অফ পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং’ শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, নারীদের মাসিক বন্ধ হবার পরও রক্তক্ষরণ হলে তাকে পোস্ট মেনোপজাল ব্লিডিং বলে এবং এটা নারী স্বাস্থ্যের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই রক্তক্ষরণের কারণটা স্বাভাবিক কিন্তু ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটা জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য হয়ে থাকে।  

তাই প্রত্যেক নারীকে মাসিক বন্ধ হবার পরও এরকম রক্তক্ষরণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা নেয়া উচিত। কারণ নারীদের জরায়ুর ক্যান্সার জটিলতা বা সমস্যা তৈরি হবার আগেই ধরা পড়লে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই যেসব নারীদের জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাদেরকে মাসিক বন্ধ হবার পরও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ও ফলোআপে থাকা উচিত।  

সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা খাতুন বলেন, পৃথিবীব্যাপী জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রবণতা কমলেও বাংলাদেশে নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার দ্বিতীয় স্থানে আছে। গ্লোবোকন ২০২০ এর তথ্য মতে, প্রতিবছর ৮ হাজার ৬৮ জন নারীর জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত হয় এবং প্রতিবছর ৫ হাজার ২১৪  জনের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে শুরু করে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন নারী জরায়ুর ক্যান্সার ঝুঁকির মধ্যে আছে। বাল্যবিয়ে, কম বয়সে সন্তান নেওয়া, ২ বা ৩ এর অধিক সন্তান নেওয়া, ধূমপান ইত্যাদি জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।  

তিনি জানান, জরায়ু ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ হলো, অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসে রক্ত যাওয়া, অতিরিক্ত সাদা স্রাব, গন্ধযুক্ত সাদাস্রাব যাওয়া ইত্যাদি। জরায়ুর ক্যান্সারে চিকিৎসা নির্ভর করে কোন পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায় এবং ৪র্থ পর্যায়ের জরায়ুর ক্যান্সার রেডিওথেরাপি মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।  

কনসালটেন্ট ডা. মনোয়ারা বেগম জরায়ু মুখ ক্যান্সার সনাক্তকরণ ও প্রতিকার বিষয়ে বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা যায়। এই ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য ৩০ বৎসরের ঊর্ধ্বে সবাইকে সচেতন করতে হবে এবং ভায়া পরীক্ষা করায় মাধ্যমে জরায়ু মুখ ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় তা জানাতে হবে। ভায়া ছাড়াও এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সার চিহ্নিত করা যায়। জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে বালিকাদের (৯-১৪ বৎসরের মধ্যে) এইচপিভি ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে এবং দুই এর অধিক সন্তান নিতে নিষেধ করতে হবে। জরায়ু মুখ ক্যান্সার শনাক্তের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিন কার্যক্রম সরকারের ইপিআই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে তিনি মত দেন।