ইহুদিদের সঙ্গে মহানবীর চুক্তিতে যা ছিল

প্রতীকী ছবি

ইহুদিদের সঙ্গে মহানবীর চুক্তিতে যা ছিল

 জাওয়াদ তাহের

প্রিয় নবী (সা.) হিজরতের পর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করেন। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস, সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্ববন্ধন এবং সুশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর মদিনার অমুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সমঝোতা গড়ে তোলার কাজে প্রিয় নবী (সা.) মনোযোগ দেন। তাঁর এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল জাতি-বর্ণ-ধর্ম-নির্বিশেষে সব মানুষের সুখী, সমৃদ্ধ ও বরকতময় জীবনের পথ সুগম করা।

পাশাপাশি মদিনবাসী ও পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যবোধ আর একতার বন্ধন মজবুত করা।

মদিনার মুসলমানদের নিকটতম প্রতিবেশী ছিল ইহুদিরা। মদিনায় মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিমদের সুশৃঙ্খল সমাজ সংগঠন, ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন এবং ক্রমবর্ধমান শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপারে ইহুদিরা সতর্কতার সঙ্গে সব কিছু লক্ষ করছে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রেই মুসলমানদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করলেও প্রকাশ্য কলহ কিংবা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়ার মনোভাব প্রকাশ করেনি।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজন অনুভব করেন। এরপর তাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এ চুক্তিতে তাদের জানমালের সাধারণ নিরাপত্তা এবং ধর্মকর্মের স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

নিম্নে তার উল্লেখযোগ্য ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো—

এক. বনু আওফের ইহুদিরা মুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশে এক উম্মতের মতো বসবাস করবে, কিন্তু উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। এটা তাদের নিজেদের অধিকার হিসেবে যেমন গণ্য হবে, ঠিক তেমনিভাবে তাদের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত তাদের এবং তাদের দাস-দাসীদের বেলায়ও গণ্য হবে। বনু আওফ ছাড়া অন্য ইহুদিদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।

দুই. মুসলিম ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়ের লোক নিজ নিজ আয় উপার্জনে দায়িত্বশীল থাকবে।

তিন. এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের সঙ্গে অন্য কোনো শক্তি যুদ্ধে লিপ্ত হলে চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো সম্মিলিতভাবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

চার. এ চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের লোকেরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি, সদিচ্ছা ও পারস্পরিক উপকারের ভিত্তিতে কাজ করে যাবে, কোনো অন্যায়-অনাচার কিংবা পাপাচারের ভিত্তিতে কাজ করবে না।

পাঁচ. মিত্রপক্ষের অন্যায়-অনাচারের জন্য সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।

ছয়. কেউ কারো ওপর জুলুম করলে মজলুমকে সাহায্য করা হবে।

সাত. চুক্তিবদ্ধ কোনো পক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যত দিন চলতে থাকবে তত দিন ইহুদিদেরও মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধের খরচ বহন করতে হবে।

আট. এই চুক্তিভুক্ত সবার জন্যই মদিনায় কোনো প্রকার হাঙ্গামা সৃষ্টি করা কিংবা রক্তপাত ঘটানো যাবে না।

নয়. চুক্তিভুক্ত পক্ষগুলো কোনো নতুন সমস্যা কিংবা ঝগড়া-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ার উপক্রম হলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর মীমাংসা করবেন।

দশ. কুরাইশ ও তাদের সহায়তাকারীদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না।

এগারো. ইয়াসরিবের (মদিনা) ওপর কেউ হামলা চালালে সম্মিলিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং নিজ নিজ অঞ্চলে থেকে তা প্রতিহত করতে হবে।

বারো. কোনো অন্যায়কারী কিংবা পাপীর জন্য এ চুক্তি সহায়ক হবে না।

এ চুক্তি সম্পাদনের ফলে মদিনা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল এক শান্ত-স্বস্তিময় সাম্রাজ্যের রূপ ধারণ করে। পরবর্তী সময়ে এর রাজধানী হয় মদিনা, যার নেতৃত্বে ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। এভাবে ধীরে ধীরে মদিনা ইসলামী হুকুমতের রাজধানীতে পরিণত হয়ে যায়।

(আর-রাহিকুল মাখতুম অবলম্বনে)

এই রকম আরও টপিক