বন্ধ ডলু বালু মহালের হঠাৎ ইজারা: ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী

বন্ধ ডলু বালু মহালের হঠাৎ ইজারা: ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসী

অনলাইন ডেস্ক

সাতকানিয়ায় ডলু বালু মহাল-৪ আবারও ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে প্রশাসনের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হতবাক ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। তারা অবিলম্বে জনবিরোধী এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ও বিতর্কিত বালু মহাল ইজারা প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ চায়। এ বিষয়ে একাধিক লিখিত আবেদন করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ করিম বলেন, আমরা অনেক বালু মহালের ইজারা বন্ধ রেখেছি। জেলা প্রশাসন কোন বালু মহাল ইজারা দেবে, কোন মহাল ইজারা দেবে না তা ঠিক করে না। উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন করে। তবুও বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি উঠেছে, তা আমাদের বিবেচনায় থাকবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং বালু মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে অনেকে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং মহালের ইজারা বাতিল করে।

ওই সময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালু মহাল দুটির ইজারা স্থগিত করে। কিন্তু হঠাৎ জেলা প্রশাসন ডলু নদীর বালু মহাল ৪ ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালু মহালের সঙ্গে। তবে ৩ নং বালু মহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি।

তাদের অভিযোগ, ৪ নং বালু মহাল ইজারা নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তারা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালি বিক্রি করেছে। তাদের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধ কথা বলার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধাচরণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এর ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।

অথচ এলাকাবাসীর বাড়ি ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু মহাল ৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে। এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের। তারা মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করেছে। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারে না উপজেলা প্রশাসন।

নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে যদি কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করবো। বন্ধ বালু মহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীও ডলু নদীর ৪ নং বালু মহাল ইজারা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই আবেদনে সুপারিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভী। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন- বর্তমান সরকার ডলু ভাঙন রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া বালু মহালের ইজারা নিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার হবে।

তিনি বলেন, ডালুর বালি উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। অতীতে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার হাজারও মানুষ ভাঙনে তাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি হারাবে। বিলীন হবে শত শত একর কৃষি জমি। তাই তিনি অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে ডলুর ৪ নং বালু মহালের ইজার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।

এই রকম আরও টপিক