রোজার নিয়ত যখন ও যেভাবে করতে হয়

সংগৃহীত ছবি

রোজার নিয়ত যখন ও যেভাবে করতে হয়

মুফতি সাদেকুর রহমান

রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও মুক্তির সওগাত নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান মুমিনের দ্বারপ্রান্তে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার এই রমজান মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় একজন মুমিন তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত হতে পারেন। হতে পারেন রাসুলের (স.) শ্রেষ্ঠ একজন উম্মত।

লাভ করতে পারেন ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণ। তবে তা করতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বাতলানো পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের নমুনায়। ।

রোজা যাদের ওপর ফরজ
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর রমজানের রোজা রাখা ফরজ, যখন সে সুস্থ ও মুকিম (স্থায়ী বাসস্থানে বসবাসকারী ব্যক্তি) অবস্থায় থাকবেন।

তবে নাবালেগ, পাগল ও কাফেরের ওপর রোজা ফরজ নয়। অসুস্থ ও মুসাফিরের ওপর রমজানের রোজা ফরজ হলেও তা ওই অবস্থায় আদায় করা ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি-১/১৯৫)

রোজা সহিহ্ হওয়ার শর্ত
রোজা সহিহ হওয়ার শর্ত দুটি। এক. রোজার নিয়ত করা। সুতরাং কেউ নিয়ত না করে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা রোজা হিসেবে গণ্য হবে না।

দুই. নারী হায়েজ ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। অতএব মাসিক পিরিয়ড বা নেফাস চলাকালীন কোনো নারী রোজা রাখলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া আলমগিরি-১/১৯৫)

রোজার নিয়ত 
নিয়ত আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো মনে মনে ইচ্ছা করা। অতএব কেউ যদি সূর্যাস্তের পরবর্তী কোনো একসময়ে মনে মনে এই ইচ্ছা করে যে, আমি আগামীকাল রমজানের রোজা রাখব, তা হলে তার নিয়ত পূরণ হয়ে যাবে। নিয়ত সহিহ হওয়ার জন্য মুখে উচ্চারণ করা শর্ত নয়। তবে মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। (ফাতাওয়া আলমগিরি-১/১৯৫) 

রোজার নিয়ত যেভাবে
সূর্যাস্তের পর থেকে পূর্ব অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময়ের আগ পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করার সুযোগ আছে। তবে সুবহে সাদিকের আগেই নিয়ত করে নেওয়া উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে- ২/২২৯; আল বাহরুর রায়েক-২/২৫৯)

তবে রোজার জন্য সাহরি খেলেও রোজার নিয়ত হয়ে যায়। আল বাহরুর রায়েক-২/২৫৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৯৫

আরবি নিয়ত : نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।