সিলেটের সেরা তিন হাফেজ তালহা, ইকবাল ও মাবরুর

হাফেজ তালহা, ইকবাল ও মাবরুর

কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা 

সিলেটের সেরা তিন হাফেজ তালহা, ইকবাল ও মাবরুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ সিলেট। হযরত শাহজালাল (র.) সহ শতশত পীর আউলিয়ার স্মৃতিবিজড়িত এই পুণ্যভূমিতেই শুরু হয়েছিল দেশের হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার সর্ববৃহৎ আয়োজন ‘কুরআনের নূর পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’ এর কার্যক্রম।  

বিভাগের ৪ জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ আর মৌলভীবাজারের শতাধিক মাদ্রাসা থেকে এই প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করেছিলেন পাঁচ শতাধিক কুরআনের পূর্ণাঙ্গ হাফেজ। তাদের মধ্য থেকে সিলেট বিভাগীয় জোনের সেরা ৩ হাফেজকে নির্বাচিত করেছেন বিচারকরা।

 

তারা হলেন সিলেটের জাবালে নুর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. আবু তালহা আনহার, জামেয়া দারুল হুদা মাদ্রাসার ইকবাল আহমদ ও জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ আল মাবরুর।  

১০ বছর বয়সী মো. আবু তালহা আনহার সিলেট জেলার বাহুবল উপজেলার সোনারকান্দি গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তালহা। তার বাবা আগে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করলেও বর্তমানে বেকার।

তাই অর্থনৈতিকভাবে চাচাদের ওপর নির্ভরশীল তালহার পরিবার।  

১১ বছর বয়সী ইকবাল আহমদ সিলেট জেলার গোরানঘাট উপজেলার মেজাইপুর গ্রামের গরু-মহিষের ব্যবসায়ী জোয়াইদুর রহমানের ছেলে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় ইকবাল।

১৩ বছর বয়সী মো. আবদুল্লাহ আল মাবরুর সিলেট জেলার জালালাবাদ থানার দিঘীরপার গ্রামের মসজিদের ইমাম আব্বাস উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় মাবরুর।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় জোনের অডিশন রাউন্ডের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতার মেগারিয়েলিটি শো ‘কুরআনের নূর’ । চলতি রমজান মাসকে সামনে রেখে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় হাফেজদের এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি।

সিলেট বিভাগে প্রতিযোগিতার জন্য নিবন্ধিত পাঁচ শতাধিক হাফেজ থেকে প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ ৩০ জনকে বাছাই করা হয়। এর পরের পর্বে ৩০ জন থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হয়। এরপর সেই ১০ জন থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে বিজয়ী ৩ জনকে ঢাকায় আনা হয়েছে।

সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ও অডিটোরিয়ামে হওয়া বিভাগীয় জোনের অডিশনে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী, শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম এবং মুফতি আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা।  

দেশের নয়টি জোন থেকে সেরা তিনজন করে মোট ২৭ জন হাফেজ প্রতিযোগিতার মূল পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। তাদের সবাইকে অভিভাবকসহ ঢাকায় আনা হবে। আর ঢাকা বিভাগের দুই জোন (উত্তর ও দক্ষিণ) থেকে ৯ জন করে মোট ১৮ জন হাফেজ দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই ৪৫ জন প্রতিযোগী নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বিশুদ্ধ ও সুন্দর কুরআন তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা। দেশ বরণে ইসলামিক স্কলার ও অভিজ্ঞ হাফেজদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারক মণ্ডলী তাদের মধ্য থেকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য ৫ জন কুরআনের হাফেজকে বাচাই করবেন।

রিয়েলিটি শো ও দেশব্যাপী হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩ ‘কুরআনের নূর’ এর প্রথম বিজয়ী একজন পাবেন ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা। দ্বিতীয় বিজয়ী একজন পাবেন ৭ লাখ টাকা ও সম্মাননা। তৃতীয় পুরস্কার একজন পাবেন ৫ লাখ টাকা ও সম্মাননা। চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার হিসাবে ২ জন পাবেন ২ লাখ টাকা করে ও সম্মাননা। সেরা আটে থাকা অন্যরাও পাবেন এক লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা।

এই প্রতিযোগিতায় বিচারকের প্যানেলে আছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী, কোরআনের উপরে সর্বোচ্চ ডিগ্রি মুত্তাসিল সনদের অধিকারী ও ১০ কিরাতের বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক কিরাত তিলাওয়াত সংস্থার (ইকরা)  সহ-সভাপতি শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারি, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি এহসানুল হক জিলানী ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম।  

বৃহৎ এই আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দৈনিক কালের কণ্ঠের উপ-সম্পাদক ও অনুসন্ধানী সেলের প্রধান হায়দার আলী, সঙ্গে ছিলেন নিউজে টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের সহযোগী প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিকুর রহমান শ্রাবণ। বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন পুরাণ ঢাকার মেয়র মুহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের ইমাম ইমরান নূর উদ্দিন।  

এছাড়াও আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে  প্রতিযোগিতায় সার্বিক সহায়তা করেছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির সভাপতি মো. ইয়াকুব আলী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মানিক।

কুরআনের হাফেজদের নিয়ে বৃহৎ এই রিয়েলিটি শো চলতি রমজানে প্রতিদিন নিউজে টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে। এর মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে- দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও ক্যাপিটাল এফএম।  

উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস ও বহুল প্রতীক্ষিত সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে নিবেদন করা হচ্ছে ‘কুরআনের নূর’। এই আয়োজনের মাধ্যমে কোরআনের শ্রেষ্ঠ হাফেজদের সম্মাননা ও আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করবে বসুন্ধরা গ্রুপ। বরাবরই আন্তরিকতার সঙ্গে কুরআনে হাফেজদের পাশে থেকেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তবে এবার এই হাফেজদের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার শুভসূচনা হচ্ছে এই রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে।  আগামী বছর থেকে প্রতিযোগিতাটি আন্তর্জাতিকভাবে আয়োজনের প্রত্যাশা জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি।