ময়মনসিংহের মেয়ে অনশন করছে সাতক্ষীরায়!

সন্তানকে কোলে নিয়ে বাড়ির আঙিনায় অনশনরত গৃহবধূ সালমা খাতুন

ময়মনসিংহের মেয়ে অনশন করছে সাতক্ষীরায়!

শাকিলা ইসলাম জুঁই • সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 

‘রাতভর মশা কামড়িয়েছে। শিশুটিরও শুরু হয়েছে পাতলা পায়খানা। এমন অমানবিক অবস্থায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে রেখেছে আমাকে। রাতে আমাকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টাও করা হয়েছে।

টেনে-হেঁচড়ে বাইরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে’- মনের কষ্টগুলো এভাবেই তুলে ধরলেন গৃহবধূ সালমা খাতুন।

আজ (১৮ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত  প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে বিরতিহীন অনশনে ছিলেন সালমা। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার উপজেলার মহিষতাড়া গ্রামের শেখ জামাল হোসেনের মেয়ে তিনি। ২০১২ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে সাতক্ষীরার সুলতানপুরের দুলাল হাসানের ছেলে অমিত হাসান ফাহাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

তবে ২০১৭ সালে সংসার ফেলে চলে যান ফহাদ।  

সালমা বলেন, ‘শ্বশুর বাড়ির লোকজন এতো নিষ্ঠুর, এতো নির্মম- যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি একটা মেয়ে। তবুও আমার নিরাপত্তার বিষয়কে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমার এই দুঃসময়ে পুলিশ শুধু দেখে গেছে, কিন্তু নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি, স্বামীর ঘরে উঠতেও সাহায্য করেনি। এখন আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমার চারদিকে তালাবদ্ধ। সেখানে একটি বাথরুমও নেই। সিঁড়ির নিচে কী করে থাকবো?’ 

তিনি জানান, ২০১২ সালের ১৪ জুলাই ময়মনসিংহে ফহাদের সাথে তার বিয়ে হয়। এর মধ্যে তাদের ঘরে আসে মেয়ে অবন্তী হাসান ফারিয়া। কিন্তু ২০১৭ সালে স্বামী ফহাদ তাকে ও শিশু কন্যাকে ফেলে চলে যায়। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই, এমনকি কোনো খোঁজখবরও নেয় না। উপায় না পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন বলে জানালেন সালমা।  

সালমা খাতুন আরও জানান, অনেক চেষ্টার পর অবশেষে তিনি তার কন্যা সন্তানকে নিয়ে ফহাদের সাতক্ষীরার বাড়িতে ধর্ণা দেন। সোমবার দুপুর ২টা থেকে রাত পার হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।  

সালমা বলেন, ‘অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের পর আমার ও আমার স্বামীর কিছুদিনের জন্য জেল হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে উঠলে আমরা আইনি বাধা কাটিয়ে উঠি। কিন্তু এতে বাধ সাধেন আমার শাশুড়ি আকলিমা খাতুন। ’ 

‘অবশেষে গেল ১২ আগস্ট শাশুড়ি আকলিমা সব মেনে নিয়েছেন বলে আমাকে জানান এবং আমাকে সাতক্ষীরায় চলে আসতে বলেন। এখন বুঝছি তিনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাকে ডেকে এনেছেন। ’ 

অসহায় এই গৃহবধূ জানান, তিনি গেল ৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায় পৌঁছলে শাশুড়ি আকলিমা তাকে একটি ভাড়া বাসায় রেখে দেন। এরপর কয়েকদিন আগে থেকে তাকে ভাড়া বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন আকলিমা। নিরুপায় হয়ে তিনি শ্বশুর বাড়ির দরজায় এসে অনশন শুরু করেছেন।  

তিনি জানান, তার মেয়ে ফারিয়ার ডিএনএ টেস্ট হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে সে ফহাদের সন্তান। তার কাছে বিয়ের কোনো দালিলিক কাগজপত্র নেই। সব কিছু রয়েছে ফহাদ ও ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে। এ অবস্থায় তিনি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন, সেই প্রশ্ন সালমা খাতুনের।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইল আকলিমা খাতুন বলেন, ‘আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর তার ছেলের মামলার দিন। এ মামলার বাদী সালমা খাতুন নিজেই। আমি বলেছি ওইদিন তাকে জেল থেকে জামিনে আনতে পারলে ফহাদের ইচ্ছে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সালমা যে আমার ছেলের বউ, এমন কোনো প্রমাণ সে দেখাতে পারেনি। ’

সাতক্ষীরা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন জানান, ‘সালমাকে ওই বাড়িতে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। তারপর ফহাদ বাড়ি এলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। ’

তবে এসআইয়ের অনুরোধ রাখে নি ফহাদের পরিবার। সালমাকে বাড়ির ভিতরে না রেখে প্রাচীর ঘেরা খোলা আঙিনায় রাখা হয়েছে।  


শাকিলা▐ অরিন▐ NEWS24

সম্পর্কিত খবর