সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ২১ শতাংশ 

সংগৃহীত ছবি

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ২১ শতাংশ 

অনলাইন ডেস্ক

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। আর্থিক টানাপড়েনে অনেকে শেষ সঞ্চয়টুকুও ভেঙে খাচ্ছে। আর এতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে সঞ্চয়পত্র, বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে বিনিয়োগ বা বিক্রি কমেছে ২১ শতাংশ।

টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১২ হাজার ৮৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ সরকারকে বিপুল টাকা খরচ করতে হয়। সাধারণত জনগণের করের টাকা থেকে এই সুদের টাকা পরিশোধ করা হয়।

এ জন্য গত বছর সরকার নিয়মও বেঁধে দেয় যে পাঁচ লাখ টাকার ওপর সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক, যা নিরুৎসাহিত করে অনেককেই।

সরকারের বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দিন দিন কমছেই। অর্থ বিভাগ বলেছে, সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে আগের মতো প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কারণ তিনটি। প্রথমত, সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ সীমা নামিয়ে আনা হয়েছে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে’। তৃতীয়ত, মুনাফার হারের কয়েকটি স্তর করা হয়েছে। এসব সংস্কার কার্যকর করায় সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ আগের তুলনায় কমেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম বলেছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার খুব বেশি কমেনি, কিন্তু সমস্যা হলো নগদায়নের হার বেড়ে গেছে। অর্থাৎ টাকা তুলে ফেলার একটা প্রবৃত্তি আছে মানুষের মধ্যে।

সঞ্চয় অধিদপ্তর সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আগের মাস, অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয় এক হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। নভেম্বরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ছিল ৯৮৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অক্টোবরে নিট বিক্রি ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা ঋণাত্মক হয়। সেপ্টেম্বরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৭০ কোটি ৬৩ হাজার টাকা ঋণাত্মক ছিল।

এতে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের সাত মাসের চার মাসই সরকার কোষাগার থেকে গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধ করেছে। বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎস করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরো কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর পরও বিক্রি বাড়তে থাকে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর বিপরীতে প্রথম সাত মাসে এই খাত থেকে কোনো ঋণ পাওয়া যায়নি উল্টো তিন হাজার ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে এক লাখ আট হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে গ্রাহকদের মূল টাকা (বিনিয়োগ) ও মুনাফা (সুদ) বাবদ পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর এই খাতে সরকারের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫২.৪৪ শতাংশ কম। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২০২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল। সে হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে এই খাত থেকে ৩৭.৫০ শতাংশ কম ঋণ নিয়েছে সরকার।

সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মোট এক লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০০০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক